শাইখ সিরাজ : ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী—এসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের যে বিশাল কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে, এর সূচনা পর্বে ছিলেন একজন নারী। তিনিই সাহিদা বেগম। দেশে পেঁয়াজের চাহিদার বিবেচনায় এর উৎপাদন বাড়ানোর গুরুত্ব বুঝেছিলেন তিনি। সাহিদা অল্প অল্প করে বাড়িয়েছেন তাঁর চাষের পরিধি। এখন দেশের পেঁয়াজবীজের চাহিদার বড় একটি অংশ জোগান তিনি।
সাহিদা বেগমের বাড়ি ফরিদপুর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামে। স্বামী মো. বক্তার হোসেন খান ব্যাংকের কর্মকর্তা। বাড়ির পাশের একজনকে পেঁয়াজবীজ চাষ করতে দেখে সাহিদা আগ্রহী হন।
শুরুটা ২০০৪ সালে। প্রথম বছর ২০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে দুই মণ বীজ পান সাহিদা। তা বিক্রি করেন ৮০ হাজার টাকায়। এর পর থেকে উৎপাদন বাড়তেই থাকে।
সাহিদার স্বামী বক্তার পৈতৃক সূত্রে চার একর জমির মালিক। বাকি জমি এলাকাবাসীর কাছ থেকে লিজ কিংবা বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন সাহিদা বেগম। সাহিদা বললেন, পেঁয়াজের বীজ পেতে দীর্ঘ ছয় মাস জমিতে কাজ করতে হয়। নভেম্বর থেকে রোপণ শুরু হয়। ক্ষেত থেকে বীজ শুকিয়ে প্রস্তুত করতে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত সময় লাগে। আর বিক্রি করতে করতে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস চলে যায়।
সাহিদা প্রায় ২০ বছর ধরে উৎপাদন করছেন পেঁয়াজবীজ। সফলভাবে পেঁয়াজ ও পেঁয়াজবীজ চাষ করে পেয়েছেন বহু পুরস্কার। হয়েছেন দেশের সেরা নারী কৃষক। বীজ বিক্রি করেই আয় করেছেন কোটি টাকা। নিজের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অনেক নারীর।
একাধিকবার সাহিদার সাফল্যের চিত্র টেলিভিশনে তুলে ধরেছি। কৃষিতে তাঁর অবদানের কথা গণমাধ্যমে বেশ প্রচার পেয়েছে। সাহিদা বেগম আজ প্রতিষ্ঠিত নারী কৃষি উদ্যোক্তা। ফরিদপুরের অম্বিকাপুরের মাঠ থেকে তিনি গত বছর পেঁয়াজ বীজের চাষ সম্প্রসারণ করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী কৃষিজমিতে।
ঠাকুরগাঁওয়ে সাহিদা বেগম জমি লিজ নিয়েছেন সুগার মিলের কাছ থেকে। বছর বিশেক আগেও সেখানে আখের চাষ হতো। ক্রমাগত লোকসানে সুগার মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে পতিত পড়ে ছিল আখ চাষের জমিগুলো। সেই জমিতেই সাহিদা বেগম বপন করেছিলেন পেঁয়াজ নামের নতুন ‘সম্ভাবনার বীজ’। ফলনও পেয়েছেন ভালো। সব মিলিয়ে গত বছর বীজ বিক্রি করেছেন ২০ টন। এ বছর ৭৫ একর জমিতে চাষ করেছেন পেঁয়াজের বীজের। এবারের প্রত্যাশা আরো বেশি।
কৃষির যে অনুপম শক্তি, তার দেখা পেয়েছেন সাহিদা বেগম। তিনি উদ্বেলিত। আরো অনেক পথ অতিক্রমে সাহসী হয়ে উঠেছেন। নারী হয়ে ভরসা করার মতো যে ছায়া হয়ে উঠেছেন, তার নিচে ঠাঁই দিতে চান আরো অনেককে।
কার্যকর কৃষি উদ্যোগগুলো এমনই। সুপরিকল্পিত উৎপাদনের সঙ্গে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার সংযোগ স্থাপন করতে পারলে সাফল্য অনিবার্য। এর জন্য চাই একাগ্রতা আর কাজের প্রতি সততা। যে সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছে সাহিদা বেগমের হাত ধরে, তা ছড়িয়ে পড়ুক উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে। পাশাপাশি কৃষির নতুন সম্ভাবনাগুলো বিকশিত হোক। এ ধরনের ব্যক্তি উদ্যোগগুলোতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা উন্নয়নের ধারা বেগবান করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।