জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের খানসামায় ২২ বছর আগে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও’র সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন তসলিম উদ্দিন। তখন তার বয়স ছিল ৩০ বছর। তার আওতায় এক নারী স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করতেন।
ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক গড়েন তোলেন তসলিম। এক পর্যায়ে ওই নারী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিয়ের চাপ দেওয়ায় নারীর জোরপূর্বক গর্ভপাতও ঘটানো হয়। সেই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওই মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তসলিম। অবশেষে ২২ বছর পর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরে ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিলেন এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, দিনাজপুরের খানসামা এলাকায় এক শিক্ষিকাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গর্ভপাত ঘটানোর মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তরমুজ ব্যবসার আড়ালে আত্মগোপনে ছিলেন।
দীর্ঘ ২২ বছর পর তাকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউসিয়া ফলপট্টি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামির বরাত দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন জানান, তসলিম উদ্দিন ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইউনিয়নের সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজার ছিলেন। ১৪ জনের মধ্যে একজন বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগ পান এক শিক্ষিকা। কাজের সূত্রে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তসলিম উদ্দিন ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতেন।
নিয়মিত যোগাযোগের ফলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেপ্তারকৃত তসলিম বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।
তবে এই তথ্য ওই শিক্ষিকার কাছে গোপন করেন তিনি। শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে তাকে নানাভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি তসলিমকে জানিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন তসলিম নিজেকে বিবাহিত দাবি করে কৌশলে সন্তান গর্ভপাত করান।
র্যাব-৩ অধিনায়ক আরও জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মানসম্মান ও গর্ভের সন্তান হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এমনকি তখন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরবর্তীতে আসামি তসলিম চাকরি ছেড়ে ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফলে ভুক্তভোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ভ্রুণ নষ্ট করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল তসলিমকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মামলা দায়ের করার পর থেকেই তসলিম আত্মগোপন করেন উল্লেখ করে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, মামলা হওয়ার পর তসলিম তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন। এরপর থেকে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। প্রথম দুই বছর একটি ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারিম্যান, এরপর তিন বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। মামলার রায় হওয়ার পর গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনও মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনও এনজিওর মাঠকর্মী হিসেবে ছদ্মবেশে কাজ করে আসছিলেন।
র্যাব জানায়, এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন সময়ে গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় আত্মগোপন করেন তসলিম। সর্বশেষ গাউছিয়া বাজারে ফলপট্টিতে একটি ফলের আড়তে তরমুজ ব্যবসা শুরু করেন।
কোন জিনিস যা ঠান্ডায় কালো, গরমে লাল আর ব্যবহার করলে সাদা হয়ে যায়
গ্রেপ্তারকৃত তসলিম উদ্দিন চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম। তার বাবা ছিলেন কৃষক এবং মা গৃহিণী। সৈয়দপুর কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।