জুমবাংলা ডেস্ক: রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ ও বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেক রহমানের ফাঁদে পড়ে ইমেজ সংকটে পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় ও বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যবসায়িক পার্টনারের কথা বলে সাকিবের তারকাখ্যাতি যত্রতত্র বিক্রি করে রাশেক রহমান কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা, ব্র্যান্ডিং করে দাঁড় করিয়েছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আর সর্বশেষ অনুমতি না নিয়েই মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিতে অবৈধভাবে শুরু করেন কমোডিটি ব্যবসা।
বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির রংপুরের মুন্সিপাড়া অফিসে সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবহার অনুপযোগী জরাজীর্ণ একটি ভবনে করা হয়েছে নামমাত্র অফিস। মূল দরজায় ঝুলছে তালা। ভবনটির সামনেই সাকিবের বিশাল ছবি দিয়ে টানানো হয়েছে বুরাক কমোডিটির বিলবোর্ড। তাতে লেখা, ‘সঞ্চয়ের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য, দেশের সব মানুষের জন্য এলো সুখবর। ’ বিলবোর্ডটিতে বুরাক কমোডিটি থেকে সোনা কিনে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
মুন্সিপাড়ার স্থানীয় লোকজন জানান, রাশেক রহমানই এই বিলবোর্ড লাগিয়েছেন। তারা বলেন, রাশেক এলাকায় বলে বেড়ান, সাকিব আল হাসান তার কথায় উঠবোস করেন। তার কথার বাইরে যান না। তার কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ভালো দেখে সাকিব আল হাসান নিজে এসে তার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য ধরেছেন। তার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এসব বলে তিনি এলাকার মানুষকে বিমোহিত করে বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার জন্য বলেন। ভালো মুনাফার লোভ দেখিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখতে বলেন। সাকিবের কথা বলে এই প্রতিষ্ঠানে স্বর্ণের ব্যবসা করার নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তবে রাশেকের এসব কথা মানুষ বিশ্বাস করেন না। কারণ, তাকে এলাকার সবাই দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক বলেই জানেন।
তারা বলেন, সাকিব আল হাসানের মতো আন্তর্জাতিক মানের একজন তারকার ছবি ব্যবহার অনুপযোগী জরাজীর্ণ একটি ভবনে ব্যবহার করেছে রাশেক। এ থেকেই বোঝা যায় সে কত বড় প্রতারক ও সাকিবকে কীভাবে বিক্রি করছে মানুষের কাছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চতুর রাশেক রহমান সাকিবকে অংশীদার বানিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায় সামনে রাখেন। রাশেক রহমানের কূটচাল বুঝতে না পারা সাকিবও ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে সামনে এনে খোলেন কমোডিটিজ কোম্পানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি না নিয়েই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। আর এতেই বাধে বিপত্তি। পত্রিকার বিজ্ঞাপন নজরে পড়ে যায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। এরপরই রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ ও বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি না নিয়ে ব্যবসা করার অভিযোগ তুলে চিঠি দেয় সংস্থাটি। চিঠির ব্যাখ্যা সাত কার্যদিবসের মধ্যে তলব করা হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন রাশেক রহমান। রয়েছেন মালিকানাতেও। বিএসইসির চিঠির পর পরই দেশে-বিদেশে শুরু হয় সাকিবকে নিয়ে সমালোচনার ঝড়। কারণ, সবাই এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে সাকিবকেই জানতেন এত দিন। অথচ এ প্রতিষ্ঠান দুটির পেছনের আসল কারিগর রাশেক রহমান। প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবস্থাপনার কাজ করেন রাশেক রহমানই। সাকিবকে রেখেছেন শুধু নাম বিক্রি করতে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কেবলমাত্র বাংলাদেশে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষেই খোলা সম্ভব। তারা সেটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হিসেবে চালু করেছেন নাকি অন্য কোনোভাবে চালু করেছেন, তা বোঝার জন্য আমরা আরও তথ্য চাওয়ার চেষ্টা করছি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এ ধরনের কাজ যারা করছে তারাই আইন অমান্য করছে। তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। সুতরাং তাদেরকে এখনই থামানো উচিত। তাদেরকে আইন না মানার দায়ে আইনের আওতায় আনা উচিত। সাধারণ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও ক্ষতিগ্রস্ত করার আগেই এদেরকে থামাতে হবে।
রাশেক রহমানের দুর্নীতি জালিয়াতি:
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় রাশেক রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিঠাপুকুর উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নৌকার মনোনয়ন দিয়ে পাস করিয়ে দেওয়ার নামে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা দেওয়া প্রার্থীদের অনেকেই পরে নির্বাচনে ফেল করেন। ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এসব তথ্য জানান। এ ছাড়া রাশেক রহমানের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখার ৪০ শতাংশ টাকা নানা প্রক্রিয়ায় হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলায় উচ্চমাধ্যমিক ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যে রাশেক রহমানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, মিঠাপুকুর হাসপাতালে ভবন করার নামে ও হাসপাতালে খাবার দেওয়ার নামে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রাশেক রহমান নিজের নাম দিয়ে মিঠাপুকুরে একান্ত লীগ গঠন করেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার এবং সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিপূর্বে রাশেক রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
সূত্র: বাংলানিউজ২৪
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।