জুমবাংলা ডেস্ক : জম্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও চেয়ারম্যানের সনদপত্রসহ বিভিন্ন সেবার সনদে প্রশাসকের স্বাক্ষর যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে বর্তমান সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলম জুয়েল আত্মগোপন চলে যান। পরে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক নিয়োগ দেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক।
এরপর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সকল ধরনের সনদে স্বাক্ষর নিতে গেলে জনগণকে উপজেলা পরিষদের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দপ্তরে গিয়ে স্বাক্ষর আনতে হয়। আর এতেই বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে দিঘুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার নাগরিকের।
একটি স্বাক্ষরের জন্য আসা যাওয়ার পথে খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৩০০-৫০০টাকা। এছাড়া সাধারণ মানুষ প্রশাসকের সাথে দেখা করতে মিলছে না অনুমতি। নাগরিকদের সেবা নিয়ে চরম হতাশায় ইউপি সদস্যরাও। প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র একদিন অফিস করেছেন বলে অভিযোগ ইউপি সদস্যদের।
দিঘুলিয়া দেলুয়া গ্রামের মো. মোসা ইব্রাহিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকার ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ার পর আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরা নিজেরা এখনও লর্ড মনে করেন। আমার জন্ম সনদ প্রথমে আবেদন করেছি। সেখানে স্বাক্ষর আনতে দিঘুলিয়া থেকে প্রশাসকের স্বাক্ষরের জন্য গিয়েছি। এর পর পুনরায় পরিষদে গিয়ে সনদ প্রিন্ট করেছি। সচিবের স্বাক্ষর নিয়ে আবার ঘুরতে হচেছ প্রশাসকের কার্যালয়ে। তিনি আবার দুপুর ২টার পরে কোনো সনদে স্বাক্ষর দেন না। কোন প্রজ্ঞাপনে লিখা আছে?
রবিবার জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, নাগরিক সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জটলা করছিল কয়েকজন বেকার যুবক। তারা জানায়, আগামী ১০ নভেম্বর মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্য নেওয়ার মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা। পরিষদের বারান্দায় একটি সনদপত্রের বই রাখা আছে। স্থানীয় বেকার যুবক আকাশ হোসেন, জাকির হোসেন ও আলামিন নিজেরাই লিখে নিচ্ছেন সনদ। ওই সনদ নিয়ে ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর করে নিয়ে যেতে হবে প্রশাসকের কাছে।
যুবকরা অভিযোগ করে বলেন, দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিনশত টাকা। একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কয়েকদিন। বেলা ১১টার পর তিনি তার সাটুরিয়া অফিসে বসেন। বসেই ভূমি অফিসের অফিসিয়াল নথিপত্রের কাজ করেন। আর আমাদের ভূমি অফিসের গোল ঘরে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বেলা ২টা বাজলেই তিনি আর স্বাক্ষর করবে না বলে অফিস থেকে পিয়ন জানিয়ে দেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকার পর খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। এভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
মো. ফরমান আলী আরেক সেবাগ্রহীতা বলেন, জম্ম নিবন্ধনের জন্য যাই দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকার কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে ১৫ দিন ঘুরে তার অফিসের গোল ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। এখনও স্বাক্ষর মিলেনি।
গোপালপুরের মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার দ্বৈত সনদ প্রয়োজন। জাতীয় পরিচয়পত্রে এক নাম ও জমির দলিলে ডাক নাম দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। এখন জমির খারিজ আবেদন করলে, সহকারী কমিশনার নিজেই নাম জারি আবেদন বাতিল করে দেন। তার দপ্তরের কার্যালয়ের সহকারীরা বলে দিয়েছে, পরিষদ থেকে দ্বৈত সনদ নেওয়ার জন্য। এখন পরিষদ গিয়ে দ্বৈত সনদ আনতে গিয়ে শুনি প্রশাসক এ যাবতীয় সনদে স্বাক্ষর দিবেন না। দেলোয়ার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এ্যাসিল্যান্ড নিজেই জমির খারিজের আইন বানান। আর তিনিই স্বাক্ষর দিবেন না। তাহলে কই যাব?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের পর থেকেই দিঘুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম জুয়েল পলাতক রয়েছেন। তিনি কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় ইউপি সদস্যরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কারণে অনাস্থা আনেন। এরপর তৎকালিন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার ২৯ আগস্ট এক অফিস আদেশের মাধ্যমে সাটুরিয়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর আহম্মেদকে দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেন।
দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর টিসিবি, ভিজিডি চাল বিতরণের সময় মোট ৩ দিন অফিস করেছেন। এরপর প্রশাসক পরিষদে বসেননি। ফলে ইউনিয়নের নাগরিকদের জম্ম নিবন্ধন, চেয়ারম্যানের সনদ, নাগরিক সনদপত্র, বিভিন্ন ভাতার কার্ড ও কৃষকদের কৃষি কার্ড বিতরণ স্বাক্ষর করতে নাগরিকদের যেতে হচ্ছে প্রশাসকের কার্যালয়ে।
ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, বেলা ২টার পর স্বাক্ষর না করায় নাগরিকরা সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে।
তারা আরো বলেন, একজন সাধারণ মানুষ তার কার্যালয়ে ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে না। দরজার সামনে অফিস সহায়কের অনুমতি না থাকলে ৫ ঘণ্টা বসে থেকেও লাভ হয় না।
দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিসদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রাশেদ বলেন, আমরা সকল ইউপি সদস্যরা বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসককে সপ্তাহে একদিন পরিষদে বসতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি না বসে উপজেলায় তার কার্যালয়ে যেতে বলেছেন। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নাগরিক সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
ইউপি সদস্যরা আরো বলেন, অনুমতি ছাড়া তার কক্ষে প্রবেশ মিলে না। আবার অনুমতি মিললেও প্রশাসকের সাথে দেখা করতে অনেক ভোগান্তি।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মো. তানভীর আহমদ বলেন, কোনো নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে না।
ইউনিয়ন পরিষদে বসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে নাগরিকের প্রয়োজন তিনি তার প্রয়োজনেই আমার অফিসে আবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।