মুফতি আবদুল্লাহ তামিম : ইসলাম সত্য ধর্ম। এ ধর্মের অভিবাদন জানানো হয় দোয়া করে। আর সে দোয়াটি হলো সালাম। একজন ভাই অন্যজনের সঙ্গে দেখা হলেই ইসলাম সালাম দেয়ার তাগিদ দেয়। আর এ সালামই হলো অপর ভাইয়ের জন্য দোয়া। আসসালামু আলাইকুম অর্থ আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
হযরত আবু হুরাইরা রা থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও। (তিরমিজি ২৬৮৮)
সালাম দেয়া কী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি নবী করিম সা.-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? তিনি বললেন, খাবার খাওয়ানো, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া। (বুখারি ১২)
সালাম দিলে কত নেকি
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সা-এর কাছে একজন লোক এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। নবী করিম সা. বললেন, ১০ (নেকি)। তারপর অন্য এক লোক এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। নবী করিম সা. বললেন, ২০। অতঃপর আরেক লোক এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। নবী করিম সা. বললেন, ৩০। (তিরমিজি ২৬৮৯) আমাদের মাঝে অনেকেই সালামের জবাব সঠিকভাবে দিতে পারি না। অথচ এটা একটা দোয়া।
সালাম এর সঠিক উচ্চারণ
সালামের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ জবাব হলো, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। নিয়ম হলো, কথা বলার আগেই সালাম দেয়া। প্রথমে সালাম না দিলে রাসূল সা. কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না তোমরা তাকে (কথা বলার) অনুমতি দিও না। (সিলসিলা সহিহা ৮১৭)
সালাম দেয়া সুন্নাত না ওয়াজিব
সালাম দেয়া সুন্নত, উত্তর দেয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেয়া ওয়াজিবে কেফায়া। অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেয়া উত্তম। উত্তম অথবা একইরকম শব্দে জবাব দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে, অথবা জবাবে তাই দেবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে পূর্ণ হিসাবকারী। (সুরা নিসা, আয়াত-৮৬)
যেসব অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরুহ
যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেয়া মাকরুহ। যথা, সালাত, আজান-ইকামত, জিকর , তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও প্রস্রাবরত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার : ১/৪১৪)।
হিন্দুদের সালাম দেওয়ার নিয়ম
হিন্দুদের ‘সালাম’ দেওয়া বৈধ নয়। কোনো প্রয়োজনে যদি দিতিই হয় তাহলে বলবে ‘আসসালামু আল মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। আর না জেনে হিন্দুকে সালাম দিয়ে ফেললে কোনো সমস্যা নেই। আর অমুসলিমরা আপনাকে সালাম দিলে তার উত্তরে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে।
অমুসলিমদের সালাম দেওয়ার বিধান
অমুসলিমকে ‘সালাম’ দেওয়া বৈধ নয়। কোনো প্রয়োজনে দিতে হলে ‘আসসালামু আল মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। আর অমুসলিমরা সালাম দিলে তদুত্তরে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে।
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে মুসলিমদের ওপর অমুসলিমদের প্রাধান্য দেওয়া নিন্দনীয়। তবে তাদের সঙ্গে যাবতীয় লেনদেন, সদাচরণ ও সাধারণ সম্পর্ক রাখা বৈধ। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৫১, সুরা আল ইমরান, আয়াত : ১১৮, আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩৭৪, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৯/৫৪৫, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১২/১০৩)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।