লাইফস্টাইল ডেস্ক : পৃথিবীজুড়েই কমছে শিশুর জন্মহার। শিশুর ক্রমহ্রাসমান জন্মহার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুর জন্মহার কমে যাওয়ার পেছনে যেসব কারণ বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে ‘সামাজিক বন্ধ্যত্ব’ অন্যতম। সামাজিক বন্ধ্যত্ব হলো এমন কিছু সামাজিক কারণ, যা শারীরিক সক্ষমতা থাকার পরও নারী-পুরুষকে সন্তান গ্রহণে অনাগ্রহী করে তোলে।
নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে এমন কিছু কারণের প্রতিকার তুলে ধরা হলো—
সামাজিক বন্ধ্যত্বের কারণ ও প্রতিকার
সমাজ ও প্রজনন বিজ্ঞানীরা সামাজিক বন্ধ্যত্বের পেছনে যেসব কারণ তুলে ধরেছেন তার কয়েকটি হলো—
১. আর্থিক অক্ষমতা : পারিবারিক আয়ের পরিমাণ কম হওয়ায় বর্তমানে বহু মানুষ সন্তান গ্রহণে অনাগ্রহী হয়। ইসলাম মানুষের এমন চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করে। কোরআনের নির্দেশ হলো আর্থিক অসচ্ছলতা বা দারিদ্র্যের ভয়ে ভ্রূণ হত্যা করা যাবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা কোরো না। তাদেরও আমিই জীবিকা দিই এবং তোমাদেরও। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩১)
২. বিলম্বে বিয়ে : জীবনে উচ্চাশার কারণে এবং নিজেকে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অজুহাতে বহু মানুষ বিলম্বে বিয়ে করে। তারা এমন সময় বিয়ে করে যখন নারী-পুরুষের সন্তান ধারণের মতো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা থাকে না। ইসলামে মানুষকে দ্রুত বিয়ে করতে উৎসাহিত করে। এমনকি আর্থিকভাবে কিছুটা অসচ্ছল হলেও। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ‘আইয়িম’ (জীবনসঙ্গী নেই এমন ব্যক্তি) তাদের বিয়ে সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সুরা : নুর, আয়াত : ৩২)
৩. ধনী পুরুষকে বেছে নেওয়া : বর্তমানে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়ায় নারীরা জীবনসঙ্গী হিসেবে ধনী পুরুষদের বেছে নেয়। ফলে নারী ও পুরুষ উভয়েরই জীবনসঙ্গী পেতে বিলম্ব হয়। ইসলাম নারীর সম্পদকে পাত্র-পাত্রীর গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি বানাতে নিষেধ করেছে, বরং ইসলাম সহজ বিয়েতে উৎসাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে সেটি, যার মহর সবচেয়ে সহজ (প্রদেয়) হয়।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩০৯৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সবচেয়ে বরকতময় নারী সে, যার বিয়ের মহর সহজ (প্রদেয়) হয়।’
৪. সন্তান গ্রহণে নারীর অনাগ্রহ : সন্তান গ্রহণকে বহু নারী তাদের ক্যারিয়ার গঠন ও কর্মজীবনে অগ্রগতির পথে বাধা মনে করে। ফলে তারা সন্তান গ্রহণ বা একের অধিক সন্তান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদের অধিক সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) নারী সাহাবি সালামা (রা.)-কে বলেন, তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে সে এখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে? তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী এবং সারা রাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে। তার যখন প্রসবব্যথা শুরু হয়, তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কি কি নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসী জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এই সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমাতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত ৭০টি দাস আজাদ করার সওয়াব পাবে। (তাবরানি, হাদিস : ৬৯০৮)
৫. কর্মসংস্থানের ঝুঁকি : আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি ও কর্মসংস্থানে অযাচিত প্রতিযোগিতার কারণে বহু মানুষ কর্মস্থলে ঝুঁকি বোধ করে। ফলে তারা সন্তান গ্রহণকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে পেশাগত জীবনে দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করে। মহান আল্লাহর বৈশিষ্ট্য হলো তিনি যেকোনো কাজ নৈপুণ্যের সঙ্গে করেন। সুতরাং মুমিনের দায়িত্ব হলো নিজ কাজে নৈপুণ্য অর্জন করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটা আল্লাহরই সৃষ্টি—নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৮৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ২)
৬. মাদকের সয়লাব : মাদক নারী-পুরুষের প্রজনন ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মানুষকে সুশৃঙ্খল সংসারজীবন থেকে বিমুখ করে। ইসলাম সব ধরনের মাদক নিষিদ্ধ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৭)
৭. পর্নে আসক্তি : পর্নে আসক্তি ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তরুণ প্রজন্মের প্রজনন ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পর্নে আসক্তি কখনো কখনো ব্যক্তিকে সুস্থ-স্বাভাবিক জৈবিক সম্পর্ক থেকে বিমুখ করে। ফলে মানুষ সংসার ও সন্তান থেকে বঞ্চিত হয়। ইসলামে পর্নো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ, অসংগত বিরোধিতা এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরিক করা, যার কোনো সনদ তিনি প্রেরণ করেননি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৩)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের কাছেও যাবে না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫১)
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সব প্রতিযোগিতায় সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ
৮. সমকামিতার ব্যাধি : সমলিঙ্গের প্রেম, বিয়ে ও শারীরিক সম্পর্ক, যা সমকামিতা নামে পরিচিত, তা আধুনিক বিশ্বে জন্মহার কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়ী। ইসলামে এমন বিকৃত মানসিকতা ঘৃণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি লুতকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের আগে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরা কামতৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন করো, তোমরা তো সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৮০-৮১)
আল্লাহ সবাইকে ইসলাম মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।
মুফতি আতাউর রহমান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।