জুমবাংলা ডেস্ক : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ ববিতা বলেন, ‘আমার স্বামী যৌতুকের জন্য অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তবু এই ঘটনা পুলিশকে জানাইনি। আমি শান্তি চাই, জাহিদের সঙ্গে ঘর করতে চাই। আমি মেয়ে মানুষ, গরিব মানুষ। স্বামীর ঘর তো ছাড়তে পারব না।’
সবার সামনে অমানবিক নির্যাতনের পরও স্বামীর ঘর ছাড়তে নারাজ ববিতা বানু। হাসপাতালের বেডে শুয়েও এই গৃহবধূর চাওয়া, থানা-পুলিশ যেন তার স্বামীকে জেলে না পাঠায়। শুধু মারধরের ঘটনা স্বীকার করে তার স্বামী যেন প্রতিশ্রুতি দেন যে ভবিষ্যতে এভাবে যৌতুকের দাবিতে তাকে আর মারধর করবেন না। ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার পল্লিতে, শুক্রবার বিকেলে। এই নির্যাতনের ভিডিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট মাস আগে গগনপুর গ্রামের শামীম উদ্দীন মোল্লার ছেলে জাহিদ আলীর সঙ্গে সদর উপজেলার জালম গ্রামের মর্জিনা বেগমের মেয়ে ববিতা বানুর বিয়ে হয়। সে সময় উভয় পক্ষের সম্মতিতে ২০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই আরও যৌতুকের জন্য ববিতাকে চাপ দেয়া হয়। না দিতে পারায় অধিকাংশ সময় তাকে মায়ের বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ৩০ হাজার টাকা ও একটি ছাগলসহ তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠানো হয়। এরপর শুক্রবার বিকেলে আরও ৩০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে ববিতার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
গৃহবধূকে প্রকাশ্যে নির্যাতনের ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, জাহিদ আলী তার স্ত্রী ববিতা বানুকে মাটিতে ফেলে পেটে একের পর এক সজোরে লাথি মারছেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ববিতাকে উদ্ধার করে রাতেই সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ববিতা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় আমার স্বামী যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। সবশেষ শুক্রবার বিকেলে আরও টাকা দাবি করে সে আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। এই ঘটনা আমি থানা পুলিশকে জানাইনি। আমার পরিবারকেও বলেছি আপাতত যেন থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা করা না হয়। কারণ তাতে তার জেল হতে পারে।
‘আমি শান্তি চাই, জাহিদের সঙ্গে ঘর করতে চাই। সালিশের মাধ্যমে এর সুরাহা করা হোক। তবে সবার সামনে আমাকে এভাবে মারধর করার ভুল যেন সে স্বীকার করে। আমি মেয়ে মানুষ, গরিব মানুষ। স্বামীর ঘর তো ছাড়তে পারব না।’
ববিতার মা মর্জিনা বেগমও এমনটা দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দিনমজুর পরিবার। জামাই মাঝেমধ্যে টাকা দাবি করে বসে। সব সময় তো চাহিদা পূরণ করতে পারি না। তবু বৃহস্পতিবার ৩০ হাজার টাকা ও একটি ছাগল অনেক কষ্ট করে দিয়েছি। তবু জামাই যেন ভালো থাকে, আমার মেয়েকেও যেন ভালো রাখে।
‘কিন্তু এভাবে নির্যাতন করল আমার মেয়েটাকে! সবার সামনে মারছে মেয়েটাকে। মেয়েটা আমার কত কষ্ট পেয়েছে। আমার মেয়ে থানায় অভিযোগ করতে দেয়নি। কিন্তু জাহিদের যেন শাস্তি হয় এটা চাই। সে যে ভুল করেছে, অন্যায় করেছে সেটা মাথা নিচু করে তাকে স্বীকার করতে হবে। এমন একটা পশুর সাথে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি ভাবতেই খারাপ লাগে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত জাহিদ আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, ‘ববিতার শরীরে বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাতের দাগ রয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে আরও বেশ কয়েক দিন লাগবে।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান চন্দন কুমার দেব বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়েছিলাম নির্যাতিত গৃহবধূর খোঁজ নিতে। খুব বাজেভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তির কঠিন শাস্তির দাবি করছি। আমরা ওই গৃহবধূর পাশে আছি। চাইলে তাকে আইনি সহায়তা দেয়া হবে।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ‘গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। ওই গৃহবধূর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র : নিউজবাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।