বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : স্মার্টফোন নির্বাচনের সময় আপনি হয়তো একবার হলেও দ্বিধায় পড়েছেন—আইফোন নাকি স্যামসাং? অনেকেই ব্র্যান্ড ভক্তি, অপারেটিং সিস্টেম, পারফরম্যান্স কিংবা ক্যামেরা ফিচারের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্টের মধ্যে পার্থক্যগুলো আরো সূক্ষ্ম হয়েছে। মূল প্রশ্ন এখন, “Samsung vs iPhone” – কে আসল রাজা?
Table of Contents
Samsung vs iPhone: প্রযুক্তির দুই শীর্ষ দানবের তুলনা
Samsung vs iPhone প্রতিযোগিতা কেবল স্মার্টফোনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নয়, বরং দুটি ভিন্ন দর্শন ও প্রযুক্তি দর্শনের প্রতিফলন। অ্যাপল সবসময়ই নিজস্ব হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার ইকোসিস্টেমে বিশ্বাস করে, যেখানে স্যামসাং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, তবে তাতে নিজস্ব টাচ ও ইনোভেশন যোগ করে।
স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজ বিশেষত আল্ট্রা মডেলগুলো ২০২৫ সালে টেকনোলজির শীর্ষে রয়েছে। অন্যদিকে, আইফোন ১৬ সিরিজে এসেছে নতুন A18 চিপ, উন্নত ক্যামেরা ও স্যাটেলাইট SOS ফিচার। এর পাশাপাশি আইফোনের রিসেল ভ্যালু ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য একে আলাদা মর্যাদা দেয়।
পারফরম্যান্সের দিক থেকে Galaxy S25 Ultra ও iPhone 16 Plus উভয়ই অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে স্যামসাং যেখানে AI ফিচার, ২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, S Pen ইন্টিগ্রেশন এবং স্পেস জুমের মতো অত্যাধুনিক ফিচার দিচ্ছে, সেখানে আইফোন গেমিং ও মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে A18 Pro চিপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ও গতি দিচ্ছে।
দাম ও রিসেল ভ্যালু: কোনটি সেরা বিনিয়োগ?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। Samsung vs iPhone তুলনায় দেখা যাচ্ছে, আইফোন সাধারণত কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হলেও তার রিসেল ভ্যালু অনেক ভালো থাকে।
যেমনঃ
- iPhone 16 Plus: ~৳১,৩৭,০০০
- Galaxy S25 Ultra: ~৳১,৫৭,৭৪১
তবে এক বা দুই বছর ব্যবহারের পর আইফোনের বিক্রয়মূল্য প্রায় ৭০-৮০% পর্যন্ত থেকে যায়। স্যামসাংয়ের ক্ষেত্রে এই হার কিছুটা কম, বিশেষ করে যদি আপনি আল্ট্রা মডেল না ব্যবহার করেন।
এছাড়া অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে থাকা অন্যান্য ডিভাইস যেমন MacBook, iPad, AirPods ইত্যাদির সঙ্গে seamless ব্যবহারযোগ্যতার কারণে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গিতে আইফোন পছন্দ করেন। অন্যদিকে স্যামসাং গ্যালাক্সি Buds, Galaxy Watch এবং Galaxy Tab সহ পুরো ecosystem গড়ে তুলতে পারে যারা অ্যান্ড্রয়েড প্রেমী।
অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার আপডেট
স্যামসাং ও আইফোনের মূল পার্থক্য হলো তাদের অপারেটিং সিস্টেম। আইফোন চলে iOS-এ, যা অধিকতর নিরাপদ, স্মুথ এবং অ্যাপ অপ্টিমাইজেশনে দুর্দান্ত। অন্যদিকে স্যামসাং অ্যান্ড্রয়েড বেইসড One UI ব্যবহার করে, যেটা বেশ কাস্টমাইজেবল এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী ফিচার সমৃদ্ধ।
সফটওয়্যার আপডেটের দিক থেকে আগে অ্যাপল এগিয়ে থাকলেও, ২০২৫ সালে এসে স্যামসাংও ৭ বছরের Android ও Security আপডেট ঘোষণা করেছে। যেমন:
- Galaxy S25 Ultra ও S25: ৭ বছরের আপডেট সাপোর্ট
- iPhone 16 সিরিজ: সাধারণত ৫–৬ বছরের iOS আপডেট
তবে এখনও অ্যাপলের আপডেটগুলো অধিকতর স্ট্যাবল ও নিরাপত্তা ভিত্তিক থাকে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স: কোন ফোন তুলবে সেরা ছবি?
এই প্রশ্নে Samsung vs iPhone প্রতিযোগিতা অনেকেই ক্যামেরা দিয়ে বিচার করেন। Galaxy S25 Ultra-তে রয়েছে ২০০ মেগাপিক্সেল সেন্সর, স্পেস জুম, AI-enhanced ফটোগ্রাফি ও ভিডিও।
iPhone 16 Plus-এ রয়েছে Dolby Vision ভিডিও রেকর্ডিং, ফিচার রিচ ক্যামেরা অ্যাপ ও Deep Fusion প্রযুক্তি। পোর্ট্রেট ও লো-লাইট ফটোগ্রাফিতে আইফোন দুর্দান্ত, তবে জুম, ম্যানুয়াল কন্ট্রোল ও রাতের ছবি তুলতে স্যামসাং বেশি কার্যকর।
তাছাড়া, যারা YouTube বা টিকটকে ভিডিও বানান তাদের জন্য iPhone এখনো অনেক বেশি পছন্দের কারণ এর কালার সায়েন্স ও ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন অসাধারণ। তবে Galaxy S25 Ultra-র AI ভিডিও ফিচারও পিছিয়ে নেই।
ব্যাটারি ও চার্জিং সিস্টেম
স্যামসাং সবসময় দ্রুত চার্জিংয়ে এগিয়ে। Galaxy S25 Ultra ও OnePlus 13-এ রয়েছে ৪৫–১২০ ওয়াট পর্যন্ত ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট। অন্যদিকে আইফোনে এখনও ২০–২৭ ওয়াট পর্যন্ত চার্জিং সাপোর্ট পাওয়া যায়।
তবে ব্যাটারির অপটিমাইজেশন এমনভাবে করা হয়েছে যে, iPhone 16 Plus সহজেই এক চার্জে দুই দিন পর্যন্ত চলতে পারে। স্যামসাংয়ের ক্ষেত্রেও One UI সফটওয়্যারে ব্যাটারি অপটিমাইজেশন ভালো হলেও গেমিং বা হেভি ইউজে কিছুটা কম চলে।
গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া পারফরম্যান্স
গেমারদের জন্য Apple-এর A18 Pro চিপ একটি দানব। iPhone 16 Plus বা 16e-তে PUBG, COD, Genshin Impact— সবই চলে ম্যাক্স সেটিংসে, ল্যাগ ছাড়াই। স্যামসাং গ্যালাক্সি S25 Ultra তে রয়েছে Snapdragon 8 Gen 4 বা Exynos বিকল্প, যা AI বুস্টেড গেমিং পারফরম্যান্স দেয়।
তবে iOS এ গেমস গুলোর অপ্টিমাইজেশন আরও ভালো হয়। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েডে প্রচুর গেম পাওয়া গেলেও গেমস ডেভেলপাররা প্রথমে আইফোন ভার্সনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।
ডিজাইন ও ব্যবহারযোগ্যতা
iPhone 16 সিরিজে এসেছে নতুন বেজেল-কম ডিজাইন, হালকা ও স্কয়ার্ড এজেস যা এক হাতে ব্যবহারযোগ্য। স্যামসাং তাদের ফ্ল্যাগশিপে ব্যবহার করেছে কার্ভড এজ, মেটাল ফিনিশ ও S Pen ইনপুট।
দুই ব্র্যান্ডই এখন টাইটানিয়াম বা রিসাইকেল ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফোন তৈরি করছে, যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই। তবে স্যামসাংয়ের স্ক্রিন বড় ও ম্যানুয়াল কন্ট্রোল পছন্দকারীদের কাছে অধিক প্রিয়।
নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি
Apple সবসময়ই নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি ইস্যুতে কঠোর। iPhone 16 Plus এ রয়েছে Face ID, অ্যাপ ট্র্যাকিং ট্রান্সপারেন্সি ও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন।
স্যামসাংও Knox Security, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ও প্রাইভেট শেয়ার ফিচারের মাধ্যমে নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে অ্যান্ড্রয়েডের সংযুক্তি প্রাইভেসি নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন তোলে।
(সতর্ক সূত্র: Wikipedia — উভয় ব্র্যান্ডের বিবরণে আরও বিস্তারিত জানা যাবে)
বাংলাদেশের বাজারে Samsung vs iPhone প্রবণতা
২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাজারে স্যামসাং ফ্ল্যাগশিপ সেগমেন্টে এগিয়ে, তবে অ্যাপল আইফোনের চাহিদা এখনো শহুরে ও প্রিমিয়াম ইউজারদের মধ্যে বেশি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, তরুণ প্রজন্মের অনেকে এখন Google Pixel বা OnePlus-এর দিকে ঝুঁকছে। তবে আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা স্থিতিশীল থেকে যাচ্ছে মূলত এর স্ট্যাটাস, নিরাপত্তা ও এক্সক্লুসিভ ফিচারের কারণে।
বিশ্ববাজারের প্রভাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে স্যামসাং ও অ্যাপল-ই শীর্ষ অবস্থানে থাকবে, তবে হাইব্রিড ফিচার ও এআই-এর কারণে স্যামসাং কিছুটা এগিয়ে যেতে পারে।
স্বর্ণের বাজার পরিবর্তন এর মতই প্রযুক্তি বাজারেও দ্রুত পরিবর্তন আসছে, যেখানে স্যামসাং ইনোভেশনে এগিয়ে, আর অ্যাপল বিশ্বাসযোগ্যতায় অগ্রগামী।
শেষ কথা হলো, আপনি যদি ক্যামেরা, এস পেন, জুম এবং বড় স্ক্রিন চান তবে স্যামসাং বেছে নিন। অন্যদিকে, নিরাপত্তা, স্মুথ সফটওয়্যার, ও স্ট্যাবল ফিচার চান তবে আইফোন-ই আপনার সেরা পছন্দ। ২০২৫ সালে Samsung vs iPhone লড়াইয়ের বিজয়ী নির্ভর করবে আপনার চাহিদা ও ব্যবহারের ধরনের উপর।
FAQs
১. Samsung vs iPhone— কে বেশি নিরাপদ?
আইফোন নিরাপত্তার দিক থেকে এগিয়ে। Apple-এর এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ও অ্যাপ পারমিশন কনট্রোল স্যামসাংয়ের চেয়ে উন্নত।
২. আইফোনের তুলনায় স্যামসাং কেনার সুবিধা কী?
স্যামসাং ফোনে থাকে বড় স্ক্রিন, S Pen, স্পেস জুম ও ফাস্ট চার্জিং সুবিধা। যারা ম্যানুয়াল কন্ট্রোল ও AI ফিচার চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ।
৩. আইফোন কি দীর্ঘমেয়াদে ভালো ইনভেস্টমেন্ট?
হ্যাঁ, আইফোনের রিসেল ভ্যালু অনেক ভালো এবং আপডেট অনেক বছর পাওয়া যায়।
৪. স্যামসাং কি এখন আইফোনের সমতুল্য?
২০২৫ সালে এসে Galaxy S25 Ultra-র মতো ফোনগুলো আইফোনের সমকক্ষ বলা চলে, অনেক ফিচার তো আইফোনের চেয়েও বেশি।
৫. গেমিংয়ের জন্য কোনটি ভালো?
iPhone 16 Plus গেমিংয়ের জন্য বেশি ভালো, কারণ এর A18 Pro চিপ গেমগুলোকে অপ্টিমাইজড ও দ্রুত পারফর্ম করে।
৬. ক্যামেরায় সেরা কোনটি?
ক্যামেরায় স্যামসাং বড় সেন্সর ও AI ফিচারের জন্য ভালো, তবে আইফোন ভিডিও ও লো-লাইটে এগিয়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।