জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছেন সানাই তাকাইচি। কট্টরপন্থী রক্ষণশীল এই নেত্রী মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সংসদীয় ভোটে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বলে প্রায় নিশ্চিত। রয়টার্স জানায়, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি জাপানের সমাজে নারীদের নেতৃত্বে নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জোট ও রাজনৈতিক সমর্থন
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সানাই তাকাইচি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-এর নেতৃত্বে রয়েছেন। দলটি সোমবার ডানপন্থী জাপান ইনোভেশন পার্টির (ইশিন) সঙ্গে একটি জোট চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, যা তাকাইচির বিজয় নিশ্চিত করেছে। সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়া এখন প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক নেতৃত্বে সাতসুকি কাটায়ামা
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, আবের আরেক অনুসারী সাতসুকি কাটায়ামাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এর ফলে তিনি দেশটির প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হবেন। কাটায়ামা অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এবং এলডিপির অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
জাপানের সংসদে প্রতি পাঁচ আসনের বিপরীতে নারীদের জন্য একটিরও কম আসন রয়েছে। পুরুষ প্রাধান্য সমাজে সানাই তাকাইচি-র উত্থান একটি বড় প্রতীকী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি প্রগতিশীল পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়, বরং রক্ষণশীল নীতির আরও জোরদার হওয়ার লক্ষণ।
তাকাইচির চ্যালেঞ্জ ও নীতিগত অবস্থান
৬৪ বছর বয়সী সানাই তাকাইচি নিজেকে মার্গারেট থ্যাচারের অনুসারী হিসেবে দেখেন এবং ‘জাপানের আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকাইচিকে অর্থনৈতিক মন্দা, মার্কিন-জাপান সম্পর্ক, এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তার নেতৃত্বে এলডিপি নতুন দিকনির্দেশনা পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সানাই তাকাইচির ব্যক্তিগত পটভূমি
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, সানাই তাকাইচি ১৯৬১ সালে নারা প্রিফেকচারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন অফিস কর্মী এবং মা একজন পুলিশ অফিসার। রাজনীতির বাইরে তিনি একসময় ছিলেন দক্ষ হেভি মেটাল ড্রামার। ১৯৯৬ সালে এলডিপি থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি মোট ১০ বার নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রায় তিনি জাপানের অন্যতম প্রভাবশালী নারী নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।
জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সানাই তাকাইচি-র সম্ভাব্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। যদিও তিনি রক্ষণশীল মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার এই অর্জন জাপানের রাজনীতিতে নারীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
জেনে রাখুন-
১. সানাই তাকাইচি কে?
সানাই তাকাইচি একজন জাপানি রাজনীতিক এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতা। তিনি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
২. সানাই তাকাইচির রাজনৈতিক দল কোনটি?
তিনি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-এর সদস্য এবং দলের নেতৃত্বেও রয়েছেন।
৩. কেন সানাই তাকাইচিকে ‘জাপানের আয়রন লেডি’ বলা হয়?
তার কঠোর রক্ষণশীল নীতি ও নেতৃত্বের ধরণ প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাই তাকে ‘আয়রন লেডি’ বলা হয়।
৪. সানাই তাকাইচির প্রধান চ্যালেঞ্জ কী হবে?
অর্থনৈতিক মন্দা, মার্কিন-জাপান সম্পর্ক উন্নয়ন, এবং দলীয় ঐক্য রক্ষা তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৫. সানাই তাকাইচি কবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন?
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সংসদীয় ভোটে তার নির্বাচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।