সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত কুস্তা গ্রাম। এই গ্রামের কুস্তা মোড় এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে পরপর তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। কুস্তা মোড় থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে নারচি গ্রামে আরও একটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা হতো। গত সোমবার অভিযান চালিয়ে নারচি গ্রামের খননযন্ত্রটি ধ্বংস করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীন। নারচির খননযন্ত্রটি ধ্বংস করা হলেও কুস্তার তিনটি খননযন্ত্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী মাসোয়ারা না পেয়েই নারচি গ্রামের খননযন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু কুস্তা নয়, উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাইলজুড়ী, ঘিওর ইউনিয়নের মাইলাগী, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পেঁচারকান্দা, বড়টিয়া ইউনিয়নের ফুলহারা, বানিয়াজুড়ী ইউনিয়নের জাবরা ও তরা এলাকায় অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। তবে এসব জায়গায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসনকে মাসোয়ারা দিয়েই বালু তোলা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুস্তা এলাকায় সাইফ সানোয়ার, আলতাফ ও হিমেল, বাইলজুরী গ্রামের ঠাকুরবাড়ির সামনে নাহিদ, মাইলাগিতে ময়না, এজাজ ও কামরুল, বালিয়াখোরায় টিটু, পেঁচারকান্দায় ইউসুফ, জাবরা এলাকায় জনি, সুজন, তরা এলাকায় মিলন ও রাজা এবং ফুলহারা এলাকায় মিনারের নেতৃত্বে অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু উত্তোলনের জড়িত কয়েকজন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীন সুলতানাকে ম্যানেজ করেই নদীতে অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করেন তারা। এজন্য প্রতিটি খননযন্ত্র প্রতি ইউএনওকে মাসে এক লাখ টাকা দিতে হয় তাদের। টাকা না দিলেই চলে অভিযান।
কুস্তা এলাকার খননযন্ত্রের সঙ্গে জড়িত একজন জানান, অবৈধভাবে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলনের মৌখিক অনুমতি দেন ইউএনও। এ সময় তিনি বলে দেন, কেউ অভিযোগ দিলে কিন্তু অভিযান চালানো হবে। আর কেউ কোন অভিযোগ না দেওয়া পর্যন্ত আপনারা যতদিন ইচ্ছে বালু তুলবেন, সমস্যা নেই।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বিএনপির এক নেতা বলেন, ইউএনওর সঙ্গে দেখা করার জন্য তাকে বারবার খবর পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আপনি ড্রেজার চালাবেন ঠিক আছে, কিন্তু এসে কথা বলেন যাবেন তো।
এ বিষয়ে জানতে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরীনকে তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইলে এশাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়। তবে ইউএনও’র টাকা নেয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।