ধর্ম ডেস্ক : সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এক প্রবাসী বাংলাদেশীর সান্ডা খাওয়া সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মরু অঞ্চলের এই বিশেষ প্রাণীটি নিয়ে কৌতূহল, মজার মিম ও নানা মতবিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, ইসলামি দৃষ্টিতে সান্ডা খাওয়া হালাল কি না। মূল প্রশ্নটি হলো—নবিজি (সা.) এর সময়ে সান্ডা খাওয়া হতো কি এবং তিনি এ বিষয়ে কী বলেছিলেন?
Table of Contents
সান্ডার ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি ও নবিজি (সা.)-এর প্রতিক্রিয়া
সান্ডা, যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে বলা হয় Uromastyx, আরবিতে ‘দাব্ব’ (ضبّ), এক প্রকার মরুভূমির টিকটিকি জাতীয় প্রাণী। এটি সাধারণত আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর শরীর শক্ত, লেজ মোটা ও কাঁটাযুক্ত যা আত্মরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে এর তেল ব্যবহৃত হয় হোমিও ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়, বিশেষত যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য।
সহিহ হাদিস অনুযায়ী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, “আমি ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নবিজি (সা.)-এর সঙ্গে উম্মুল মুমিনীন হজরত মায়মুনা (রা.)-এর বাড়িতে উপস্থিত ছিলাম। তখন ভুনা সান্ডা পেশ করা হলে, নবিজি (সা.) সেটি খেতে যাচ্ছিলেন। তখন মায়মুনার (রা.) বাড়ির একজন নারী বললেন, এটি ‘দাব্ব’। এই শুনে নবিজি (সা.) তার হাত সরিয়ে নিলেন।”
খালিদ (রা.) জিজ্ঞেস করলে নবিজি (সা.) বললেন, “না, এটা হারাম নয়; কিন্তু আমাদের অঞ্চলে প্রচলিত নয় বলে আমি অপছন্দ করি।” এরপর খালিদ (রা.) নবিজির সামনে তা খেয়েছেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, নবিজি (সা.) নিজে খাননি ঠিকই, তবে সাহাবিদের খেতে নিষেধও করেননি। অর্থাৎ, এটি নিষিদ্ধ নয় বরং অপছন্দনীয় হতে পারে কারো জন্য।
ফকিহদের মধ্যে মতবিরোধ: হালাল না হারাম?
ইসলামি আইন বিশারদদের মধ্যে সান্ডা খাওয়ার বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। হানাফি মাজহাব অনুসারে, এটি খাওয়া হারাম, কারণ তারা একে ‘খাবাইস’ বা অপবিত্র প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। তারা কোরআনের সুরা আ’রাফের ১৫৭ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দেন:
“আর তিনি তাদের জন্য অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেছেন।”
তবে মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব অনুসারে, সান্ডা খাওয়া হালাল। কারণ, হাদিসে নবিজি (সা.) এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেননি এবং সাহাবিরা তা খেয়েছেন। এসব মাযহাবের ফকিহগণ একে খাদ্যোপযোগী প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেন।
বর্তমান সময়ে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষত সৌদি আরব, কুয়েত ও আরব আমিরাতে এখনও স্থানীয়রা সান্ডা শিকার করে থাকেন এবং এর মাংস ও তেল নানা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। ফলে বিষয়টি শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণেই নয়, সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলাম ডেস্ক বিভাগে এই ধরনের আরও প্রাসঙ্গিক আলোচনা পড়তে পারেন। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীদের জীবনযাপন সংক্রান্ত খবরগুলোও পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
এছাড়াও, সান্ডার তেল ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও চিকিৎসাগত দিক নিয়েও গবেষণা চলছে। যেমনটি দেখা যায় এই প্রবন্ধে। যদিও একে সর্বজনস্বীকৃত চিকিৎসা বলা যায় না, তবু ঐতিহ্যগতভাবে বহু মানুষ একে উপকারী মনে করে আসছে।
ধর্মীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিগত উপলব্ধির ভূমিকা
ইসলামে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—যেটা হারাম নয়, সেটাও কেউ যদি অপছন্দ করেন, তবে তাকে বাধ্য করা হয় না। নবিজি (সা.)-এর উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, কোনো খাবার ধর্মীয়ভাবে বৈধ হলেও, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী কেউ সেটি খেতে না চাইলে তাতে সমস্যা নেই।
এটি বর্তমান সমাজেও প্রাসঙ্গিক—যেখানে মুসলমানরা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের খাবারের মুখোমুখি হন। এক্ষেত্রে হাদিসের ব্যাখ্যা ও মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
সান্ডা সংক্রান্ত সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও সমসাময়িক বিতর্ক
সাম্প্রতিক ভাইরাল ভিডিওটির পর সামাজিক মাধ্যমে সান্ডা নিয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ মজার ছলে মিম তৈরি করছেন, কেউ আবার কঠোর সমালোচনা করছেন। এই প্রসঙ্গে আমাদের বোঝা দরকার, ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা—যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্তের পিছনে আছে যুক্তি ও দলিল। তাই হাস্যরস বা সমালোচনার বদলে ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা ও যুক্তি দিয়ে বিষয়টি বোঝা উচিত।
সবশেষে বলা যায়, সান্ডা খাওয়া নবিজি (সা.) নিষিদ্ধ করেননি। তাই একে হালাল বলা যায়, যদিও এটি খাওয়া না খাওয়া ব্যক্তিগত রুচির বিষয়।
সান্ডা খাওয়া নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
- সান্ডা কি হালাল নাকি হারাম?
নবিজি (সা.) একে হারাম ঘোষণা করেননি, তবে হানাফি মাজহাব এটি অপবিত্র মনে করে। অন্য মাজহাবগুলোতে একে হালাল বলা হয়েছে। - নবিজি (সা.) নিজে কি সান্ডা খেয়েছেন?
না, নবিজি (সা.) নিজে খাননি কারণ তিনি একে অপছন্দ করতেন। তবে সাহাবিরা তাঁর সামনে তা খেয়েছেন। - সান্ডার তেল কি শরীয়তসম্মত?
আয়ুর্বেদিক বা লোকজ চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি বৈধ কি না তা মাজহাবভেদে আলাদা হতে পারে। - সান্ডা কোন দেশে বেশি খাওয়া হয়?
সৌদি আরব, কুয়েত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এটি বেশ প্রচলিত। - সান্ডা খাওয়া কি স্বাস্থ্যসম্মত?
এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক সুপারিশ নেই, তবে স্থানীয়ভাবে একে শক্তিবর্ধক মনে করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।