সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মিষ্টির পঁচা গাদ, আটা ও চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশু খাদ্য ‘সন্দেশ’। সেগুলো আবার বিভিন্ন নামী-দামি ব্রান্ডের নামে মোড়কজাত করা হয়। সবশেষে রাজধানীর চকবাজার, গাজিপুরের টঙ্গী, রংপুর ও গাইবান্দাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এরপর সেগুলো বিক্রি করা হয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের দোকান ও কনফেকশনারি দোকানগুলোতে।
মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার ধামশ্বর ইউনিয়নের একটি গ্রাম নাটুয়াবাড়ী। এটি দৌলতপুর ও সাটুরিয়া উপজেলার ধামশ্বর, কলিয়া ও বরাইদ ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী একটি গ্রাম। কলিয়া কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজ এবং কলিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে এক কিলোমিটার ভিতরে নাটুয়াড়ী গ্রামের অবস্থান। কলিয়া বাজার থেকে গ্রামে ঢুকতেই হাতের ডান পাশের বাড়িটি শুভ রাজের। এই বাড়ীতেই তৈরি হয় ক্ষতিকর শিশু খাদ্য সন্দেশ। এর পরের বাড়িটি শাহীনের। এ বাড়িতেও তৈরি করা হয় ক্ষতিকর এই খাদ্যটি। শাহীন ও শুভ রাজ সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে নাটুয়াবাড়ী গ্রামের শাহীনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের ড্রামে রাখা হয়েছে মিষ্টির পঁচা গাদ। সন্দেশ বানাতে ব্যস্ত দুই কারিগর। প্রথমে প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে গাদ নিয়ে ছেকে নিচ্ছেন এক কারিগর, অন্যজন ব্যস্ত চুলা তৈরিতে। এরপর গাদ ঢালা হচ্ছে বড় কড়াইতে। সেখানে গাদের সাথে মেশানো হচ্ছে আটা, চিনি ও বেকিং পাউডার। বেশ কিছুক্ষণ জ্বাল দেয়ার পর আটা-চিনি মিশ্রিত গাদ ঘন আঠালো হলে ঢালা হয় একটি ছাঁচে। এরপর ঠান্ডা হলে নির্দিষ্ট সাইজে কেটে নেয়া হয়। সবশেষে প্যাকেজিং করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।
শাহীন যে সন্দেশটি তৈরি করেন তার নাম দেয়া হয়েছে “নাটোরের কাঁচা গোল্লা”। এটি রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। নাটোর রাজশাহী বিভাগের একটি বিখ্যাত জেলা। এটি জীবনান্দ দাসের বনলতা ও কাঁচা গোল্লার জন্য বেশি বিখ্যাত। আর সেই নামটিই ব্যবহার করছেন অসাধু খাদ্য উৎপাদক শাহীন। আর নাটোরের বিখ্যাত কাঁচা গোল্লা মনে করে তা খাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।
শাহীনের মা ও শুভ রাজের বোন জ্যোৎস্না খাতুন বলেন, “আমার ভাই শুভ রাজ এই সন্দেশ তৈরি করত। কয়েক বছর আগে আমার ছেলেকে এই ব্যবসা করে দেয় সে। ৬-৭ বছর ধরে আমার ছেলে এই ব্যবসা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটুয়াবাড়ী গ্রামে এ ধরণের আরও ৯টি কারখানা রয়েছে। নিজ নিজ বাড়িতেই কারখানাগুলো তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদের মধ্যে আব্দুর রউফ, রাজিব, সোনা মিয়া, আলম খান, লিটন, রকি ও পাঞ্জু মিয়ার বাড়ীতে সন্দেশ তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রতিদিন এসব কারখানায় কয়েক মণ সন্দেশ তৈরি করা হয়। সন্দেশ তৈরির গাদ সংগ্রহ করা হয় টাঙ্গাইলের গোপাল মিস্টান্ন ভান্ডার, মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর মিস্টান্ন ভান্ডার ও ঢাকার বনফুল মিস্টান্ন ভান্ডারসহ বিভিন্ন মিষ্টির দোকান থেকে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেকিংসোডার কারণে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা মিষ্টির গাদে থাকা জীবাণুর কারণে খাদ্যনালীর সংক্রমণ ও পাকস্থলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকায় তাদের কিডনি ড্যামেজ, অন্ত্রনালী সংক্রমণ ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। শিশুসহ সকলেরই এসব খাদ্য পরিহার করা উচিৎ বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ক্ষতিকর এসব শিশু খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।