লাইফস্টাইল ডেস্ক : সাপ নিয়ে মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। সেই আদিকাল থেকে সাপকে নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা মিথ, রয়েছে নানা জিজ্ঞাসা।
সাপের মাথায় কি মণি আছে, সাপ কি বিনের শব্দ শুনলে নাচে, কোনো সাপকে মেরে ফেললে তার সঙ্গী সাপ কি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে? এমন নানা প্রশ্ন মানুষের মনে।
সিনেমার গল্পেও উঠে এসেছে এসব বিষয়। প্রচলিত ধারণা আর সিনেমায় দেখানো ঘটনা থেকে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে সাপের মাথায় মণি থাকে, বিনের শব্দে সাপ নাচে, সঙ্গীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয় সাপ। কিন্তু, এসবের কতটা আসলে সত্য? চলুন, জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগের (বন্যপ্রাণী) প্রভাষক মো. ফজলে রাব্বি সংবাদমাধ্যম জানান, আগে একটা সময় সাপুড়ে সমাজ কিংবা বেদে সমাজের লোকজন গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে প্রচুর পরিমাণে সাপখেলা দেখাতেন। সে সময় তারা খেলা দেখানোর খাতিরে নানান গল্প বলতেন, যার বেশিরভাগই সত্য নয়। সেখানে থেকেই ধীরে ধীরে লোকসমাজে এসব অসত্য গল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় বলে মনে করেন এই বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ।
সাপ নিয়ে মানুষের মধ্যে কী ধরনের উদ্ভট ধারণা রয়েছে, সে বিষয়ে গবেষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ। গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি জানান, সাপুড়েরা সাপ খেলা দেখানোর জন্য সাপকে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখেন। না খাইয়ে রাখেন। এর ফলে সাপ ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকে। যার ফলে খেলা দেখানোর সময় তাকে বের করা হলে সে যা সামনে পায়, তা খাওয়ার চেষ্টা করে। সেখান থেকেও সাপের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
মানুষের মতো সাপের স্মৃতিশক্তি নেই। তাই সাপ প্রতিশোধ পরায়ণ সেটিরও কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান তিনি। অর্থাৎ একটি সাপকে মেরে ফেললে তার দলের কোনো সাপ সেটির প্রতিষোধ নিতে আসে না বলেও জানান তিনি।
সাপ বীণের শব্দে নাচে সেটিকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তিনি। এ বিষয়ে এই শিক্ষক ও গবেষক বলেন, “সাপ খেলা দেখানোর সময় সাপুড়ে বিন বাজানোর সময় তার হাঁটু অনবরত নাড়াতে থাকেন। এ সময় সাপের ফোকাস চলে যায় হাঁটুর দিকে। তার ওপর কোনো কিছু আক্রমণ করতে এই আশঙ্কা থেকে সাপ সে সময় ফণা তুলতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে দংশন দেওয়ার চেষ্টা করে।” সেখান থেকেই বিনের শব্দে সাপের নাচার বিষয়ে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লে করেন মো. ফজলে রাব্বি।
সাপের মাথায় মণি থাকার বিষয়টিকেও মিথ বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, “সাপ খোলস বদলানোর সময় মাথা থেকে বদলানো শুরু করে। বিষয়টি এমন হতে পারে যে, খোলস বদলানোর সময় সেটি কোনোভাবে সাপের মাথায় আটকে গেছে, আর কেউ সেটি দেখে ফেলেছে। রোদে বা চাঁদের আলোয় হয়ত খোলসটি বেশি বেশি চকচক করছিল, সেখান থেকেই মণি বিষয়ক গুজবের সৃষ্টি হতে পারে। এটা একটা হাইপোথিসিস হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সাপের মণি বলতে কিছুই নেই।”
এদিকে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই সাপ সামনে পড়লে সেটি মেরে ফেলার প্রবণতা কাজ করে। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যাবিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবেই যেকোনো বন্যপ্রাণীর মতো বিরুপ মনোভাব পোষণ করে। বন্যপ্রাণীর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান কম থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি।” সাপের ব্যাপারে মানুষের এই নেতিবাচক মনোভাব আরও বেশি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ৯৪ প্রজাতির সাপ আছে। যার মধ্যে তিন-চতুর্থাংশ সাপই বিষহীন। সব সাপে যে বিষ থাকে না, কিংবা সব সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় না, এই ধারণাটিই মানুষের মধ্যে নেই। যে কারণে যুগ যুগ ধরে সাপের সঙ্গে একটা বৈরি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বন্যপ্রাণীর উপকারিতার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।