আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শাড়ির কি শুধুই মেয়েদের পোশাক? এই শীর্ষক আলোচনা বহু দিন ধরেই চলে আসছে। এমনকী এই পোশাকের ইতিহাস, ভারতীয় উপমহাদেশে তার বিবর্তন ইত্যাদি নিয়েও অনেকেই দীর্ঘ দিন কাজ করে চলেছেন। তার মধ্যে দেশে এবং বিদেশে বারবার শাড়ি ফিরে এসেছে আলোচনায়। এবার সেটি ফিরে এল এক ছাত্রের কারণে। কলেজের ‘এথনিক ডে’তে তিনি হাজির হয়েছিলেন শাড়ি পরে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি দিলেন তাঁর বাবা। তা নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ভরে গিয়েছে নেটমাধ্যম।
বছর খানেক আগে শাড়িকে ফ্যাশনের নতুন মাধ্যম হিসাবে হাজির করেন ইতালির এক পড়ুয়া। ভারতীয় সেই ছাত্র ইতালিতে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি সে দেশের রাস্তায় শাড়ি পরে হাঁটেন। পরে কলকাতাতেও শাড়ি পরে ফটোশ্যুট করা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু এবার অত জাঁকপূর্ণ কিছু নয়, একেবারে সাদামাঠাভাবে কলেজে হাজির এক ছাত্র, গায়ে শাড়ি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছাত্রের বাবা দীপঙ্কর সেন (সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অ্যাকাউন্টের নাম ‘সেন ডি’) লিখেছেন, ‘কলেজের ‘এথ্নিক ডে’। আমাদের সময় এসব ছিল না, আজকাল দেখি এসবের চল সর্বত্র। তা যাই হোক, ছবিতে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় জন – শাড়ি পরিহিত নব্য যুবক, সহপাঠীদের সঙ্গে— আমার পুত্র, সান্নিধ্য (ডাকনাম শঙ্খ)।’
এর পরে তিনি লেখেন, ‘শাড়ির মতো আশ্চর্য সুন্দর একটা পোষাকে সজ্জিত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে সে একেবারে নারাজ।’ এর পরে দীপঙ্করবাবুর কথা থেকে জানা গিয়েছে, কলেজে গিয়ে সান্নিধ্য শাড়ি পরেনি। বাড়ি থেকেই শাড়ি পরে রওনা হয়েছে সে। তাঁর কথায়, ‘আমি ইমপ্রেসড্ এই কারণে যে ও শাড়ি পরে অটো মেট্রো সামলে কলেজে পৌঁছেছে, শাড়ির আঁচল কুচি যথাযথ রেখে।’
আগামী পুজোয় সান্নিধ্যকে উপহার হিসাবে শাড়ি দেওয়া যেতে পারে, এমনই এক প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। লিখেছেন, ‘এবার পুজোয় জিন্স টি শার্টের সাথে ও একটা শাড়ি পেতেই পারে, তাই না?’ এ সবের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ঝড়। একদল যেমন এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন, অন্য কেউ কেউ এর বিরাট বিরোধিতাও করেছেন।
কেউ কেউ লিখেছেন, ‘মানুষের স্বাধীনতা বজায় থাকুক। অযথা ভুলভাল অশালীন বক্তব্য আসলে নিম্নরুচিরই প্রমাণ। বড্ড সুন্দর এই ছবিটি’, ‘ওনার ব্যক্তিত্ববোধ, আত্মবিশ্বাস ও পোষাক carry করবার ক্ষমতাকে কুর্নিশ জানাই। প্রচলিত ধারনার বাইরে বেড়ানোর ক্ষমতা সবার থাকে না।’
এর পাশাপাশি আবার কেউ কেউ লিখেছেন, ‘কোন ধরনের ভেক ধারণ করে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা ভ্রান্ত কাজ এগুলো? ভেক ধরা । সুস্থ মানস ও সমাজ বিধ্বংসী প্রোপাগান্ডা। নিজেকে ভ্যালিডেশনে আনার কি বায়না..।’
তেমনই কারও বক্তব্য, ‘এই পোস্টে শেয়ার আর কমেন্টের বন্যা। তার মধ্যে মধ্যযুগীয় নেগেটিভ কমেন্টগুলো দেখলে বোঝা যায়, কেন এই স্টেপ ও এই পোস্ট এটা দরকার ছিল।’ বা ‘কমেন্টে সম্মিলিত হাহাকারের মূল কারণটা বোঝা দরকার। মেয়েরা পুরুষের পোশাক পরলে সেটা বর্তমানে গ্রহণযোগ্য, কিন্তু ছেলেরা মেয়েদের পোশাক পরলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়- এর পিছনে যে মানসিকতা রয়েছে তা’ হল ছেলেরা মেয়েদের থেকে উচ্চস্থানে বসবাস করে।
বিদেশের মাটিতে বাংলা গানে দুর্দান্ত ড্যান্স দিয়ে ঝড় তুললেন দেবলীনা কুমার
তাই মেয়েরা ছেলেদের খানিক অনুকরণ করে পোশাক পরলে খানিকটা ‘ওপরে’ ওঠা যায়। কিন্তু ছেলেরা মেয়েদের মত পোশাক পরলে তো “নেমে” যাওয়া হল। সযত্নে লালিত ‘উচ্চমার্গীয় পুরুষত্বে’ এমন আঘাত বীরপুঙ্গবরা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিতে পারছে না।’ এভাবেই কমেন্টের বন্যা বইছে পোস্টে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।