লাইফস্টাইল ডেস্ক : ফ্যাশনে এখন জেন্ডার ফ্লুইড বা জেন্ডার নিউট্রাল স্টাইলিং কিন্তু বেশ ট্রেন্ডিং! চমৎকার সাজে নিজের পছন্দের পোশাকে ধরা দিচ্ছেন এক একজন মডেল ও ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সররা। পুরুষরা শাড়ি পরছেন, এটা ভাবতে একটু অবাক লাগলেও নিজেকে কীভাবে শাড়িতে মেলে ধরা যায় তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন তাঁরা। খাস বাংলার একাধিক পুরুষই এভাবেই নিজের ব্যক্তিত্বকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। দেখে নিন সেসব তাক লাগানো লুক!
শাড়ি, এই পোশাকটি এতটাই সুন্দর যে, একে যেরকম ভাবে ইচ্ছে পরা যায়। ভারতের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও রাজ্যের নারী শাড়িতে সাজিয়ে নেন নিজেকে। আর এই শাড়ির বিষয়ে বলতে গিয়ে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ও বলেন, যে শাড়ি ভৌগলিক সীমারেখা পেরিয়ে একাধিক দেশকে যুক্ত করে। সত্যিই তাই। তবে হাল ফ্যাশনে যদি আপনি একটু নজর দেন, তাহলে দেখবেন, শাড়ি শুধুই নারীর নয়, বরং পুরুষেরাও কিন্তু নিজেদের সাজিয়ে নিচ্ছেন এই বারোহাতি এক টুকরো কাপড়ে।
কেউ শাড়িকে ধুতির মতো ড্রেপ করছেন আবার কোনও কোনও ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার সাধারণভাবেই ড্রেপ করছেন শাড়ি। কখনও ব্লেজার দিয়ে স্টাইলিং করছেন! ফ্যাশনে আসছে জেন্ডার নিউট্রাল টাচ! সারা দেশেই ছড়িয়ে পরেছে সেই ছোঁয়া। পিছিয়ে নেই বাংলাও। অন্যতম ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার পুষ্পক সেন কিংবা অনুকূল ধারার মতো ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সাররা নিজেদের বারোহাতি শাড়িতে সাজিয়ে নিচ্ছেন, আর তাতে সত্যিই চমৎকার দেখাচ্ছে তাঁদের!
জেন্ডার নিউট্রাল ফ্যাশন- নিজেকে প্রকাশ করার একটা ধারা : সেই সালটা ছিল ২০০৬। যখন দিল্লির হিমাংশু তথা ‘শাড়ি ম্য়ান‘ শাড়িকে জেন্ডার নিউট্রাল গার্মেন্টের মতো করে পরেছিলেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে হিমাংশু বলেন, “যখন একজন পুরুষ শাড়ি পরেন, তখন মানুষ কীভাবে তাঁর দিকে তাকায়, তা সত্যিই দেখার মতো বিষয়। যখন আমি শাড়ি পরেছিলাম, তখন এটিকে পুরুষের পরিধান হিসেবে মনে করতে হয়েছিল। যা ছিল একদম প্রথম।
তবে আজ, আমরা অনেক ক্রিয়েটিভ মানুষকেই দেখি, যাঁরা লিঙ্গ বা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের উর্ধ্বে উঠে শাড়িকে পার্সোনাল স্টেটমেন্ট হিসেবে ক্যারি করছেন।” আসলে পোশাকের যে কোনও জেন্ডার হয় না, তা বুঝে উঠতে হয় আমাদের। আর এঁদের মতো ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সাররা বারবার সেই কথাটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই পোশাকেও এসেছে সেই জেন্ডার নিউট্রাল বা ফ্লুইড টাচ!
শাড়িতেই যখন ধুতি : বাঙালি পরিবারেই বড় হয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সর রোহিত বসু। শাড়িকে নানা রকম ভাবে পরতে দেখে বড় হয়েছেন তিনি। রোহিত বসু টাইমসে জানিয়েছেন, “অন্যান্য পরিবারের মতোই, আমার বাড়ির ছবিটিও ছিল একইরকম। সেখানে বোঝানো হত যে, শাড়ি শুধুই মহিলাদের পরার জন্যই। কিন্তু আমার সব সময়ই সেই শাড়ির দিকে নজর ছিল।” ২০১৮ সালে প্রথম শাড়ি পরেন তিনি। রোহিত বলেন, দুর্গাপুজোয় বেরনোর কথা ছিল আমাদের। আমরা সবাই তৈরি হচ্ছিলাম।
কিন্তু আমার কোনও ড্রেসই রেডি ছিল না। সে সময় দেখি, আমার মায়ের লাল শাড়ি মাটিতে পরে আছে। আর সেই সময়েই আমি শাড়িকে ধুতির মতো পরার কথা ভাবি। দারুণ লাগছিল সেদিন! আর আমি এখনও সেভাবেই শাড়ি পরে আসছি। রোহিতের ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে এই নিয়ে অনেক ভিডিয়োই আছে। যা সত্য়িই আমাদের চমকে দেয়! শাড়িকে দারুণভাবে ক্যারি করেন রোহিত, যা সত্যিই প্রশংসা করারই মতো।
ইতালির রাস্তায় বং মুন্ডা : আজ পুষ্পক সেনকে কে না চেনেন? কিন্তু প্রথম দিন থেকেই তাঁর জার্নি এত সহজ ছিল না। কিন্তু তারপরেও নিজের চেনা ছক থেকে বেরিয়ে শাড়িতে সুন্দর করে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছেন পুষ্পক। একবার নয়, বারবার নিজেকে শাড়িতেই মেলে ধরেছেন। এখন পুষ্পক তথা বং মুন্ডাকে এক ডাকেই সবাই চেনেন। কখনও শাড়ি পরে কলকাতার রাস্তায় ঘোরেন আবার কখনও ইতালির রাস্তায় শাড়ি সানগ্লাস পরে দিয়ে ঘোরেন পুষ্পক।
পুষ্পক টাইমসকে জানিয়েছেন, “আমি কাউকে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করছি না। আমি শাড়ি পরতে ভালোবাসি মানে এই নয় যে, আমি আশা করছি সব পুরুষই শাড়ি পরবেন। শুধু আমি চাই, আমাকে পরতে দেওয়া হোক। আমি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদাহরণ তৈরি করার চেষ্টা করছি। আপনি যা পরতে পছন্দ করেন, কোনও চিন্তা ছাড়াই তা পরতে পারেন।”
রাজকুমারী কোকোর নামডাকও কম নয় : জেন্ডার নিউট্রাল বা জেন্ডার ফ্লুইড ফ্যাশন নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছেই, সেই সময়ে বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অনুকূল ধারা তথা রাজকুমারী কোকোর কথা না বললেই নয়। তিনিও একইভাবে নিজেকে শাড়িতে মেলে ধরেছেন।
কখনও সাদা লাল পাড় শাড়িতে আবার কখনও বেনারসির সাজেও সেজেছেন তিনি। রাজকুমারী কোকোর নিজের ব্যক্তিত্বের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস রয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া পাওয়া যায় তাঁর সাজেও…সে জন্যই তো তিনি অনেকের মন জয় করে নিয়েছেন।
পোশাক হবে নিজের ইচ্ছে মতো : অ্যান্ড্রোজিনাস ফ্যাশন এখন বেশ ট্রেন্ডিং! সমস্ত ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন গুরুত্ব পাচ্ছে এই ধরনের স্টাইলিং ও ফ্যাশন। ফ্যাশনে আসছে জেন্ডার ফ্লুইড টাচ। অর্থাৎ, একটি পোশাকের কোনও জেন্ডার হয় না। জেন্ডার বা সামাজিক লিঙ্গ অনুযায়ী পোশাকের কোনও ভাগ হয় না।
মেয়েরাও চাইলে ধুতি পরতে পারেন, আবার ছেলেরাও নিজেদের শাড়িতে সাজিয়ে নিতে পারেন। সেটা তাঁর নিজস্বতা। নিজের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। এই আত্মবিশ্বাসকে ও এই সাহসকে আমরা কুর্নিশ জানাই। কারণ, সমাজের তথাকথিত বেড়াজাল টপকে ও হাজারও সমালোচনা পেরিয়ে যখন এঁরা নিজেদের ইচ্ছেকেই বেশি গুরুত্ব দেন, তখন একটা বিষয়ই কথা বলে এবং তা হল আত্মবিশ্বাস!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।