সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও দুই আসামির বিরুদ্ধে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ-সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এলাকায় দুটি বুলডোজার নিয়ে উপস্থিতি হয় বিক্ষুব্ধরা।

এই ঘটনার ছবি নিজের ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন ‘রাজাকার বাহিনী’ বলে আখ্যা দেন উপস্থিত জনতাকে।
এ মন্তব্যে নেটিজেনরা তাকে ‘আওয়ামী কালচারাল ফ্যাসিস্ট’, ‘ভারতীয় গুপ্তচর’ এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
শাওনের এই স্ট্যাটাসের নিচে এবং বিভিন্ন শেয়ার করা পোস্টে হাজারো মানুষ বিরূপ মন্তব্য করেছেন। অনেকেই তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
শাওনের মন্তব্যের জবাবে দিনাত জাহান মুন্নি লিখেছেন, ‘৩২ নম্বর তো, তাই ৩২ বার ভাঙতে হবে।’ অপরদিকে নাসির উদ্দিন খান ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সাহস থাকলে আজ ৩২ নম্বর আয়।’
অনেকেই শাওনকে ‘ভারতীয় এজেন্ট’ ও ‘গুপ্তচর’ বলে তার কঠোর শাস্তির দাবি করেন। রুবেল কানিস নামে একজন লিখেছেন, ‘শাওন ভারতের একজন গুপ্তচর হিসেবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। তার জমি, ব্যাংক ব্যালেন্স জব্দ করা হোক।’ ফজলে রাব্বি নামের আরেক এক্টিভিস্ট তাকে ‘ভারতীয় এজেন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন।
আল আমিন সোহাগ মন্তব্য করেছেন, ‘শাওন হয়তো কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে, এজন্য ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে এত কান্নাকাটি করছে।’ সাব্বির, জামাল আজিজ ও শরীফুল ইসলামের মতো অনেক নেটিজেন উল্টো শাওনের বাসাতেই বুলডোজার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
দিদারুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন, ‘শাওন, এরকম কথা বলে বাসায় থাকতে পারছে—এটাই হাসিনামুক্ত নতুন বাংলাদেশ। হাসিনার আমলে যদি আওয়ামীবিরোধী এরকম কথা বলতো, তবে এতক্ষণে থানায় অথবা গুম ঘরে থাকতে হতো।’
মুহাম্মদ আল আমিন হোসাইন শাওনকে ‘শাহবাগী’ উল্লেখ করে তার শাস্তি দাবি করেছেন। আফিয়া সিদ্দিকা ও মারুফ হোসাইন প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার কেন এখনো তাকে গ্রেপ্তার করছে না। আব্দুল বাসের ও এসকে সবুজ হোসেনের মতো অনেকেই তাকে ‘কুলাঙ্গার’ ও ‘খুনি হাসিনার দোসর’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
মাকসুদ আলম পাটোয়ারী ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘এই ফ্যাসিবাদের প্রোডাক্টটিকে কেউ ৩২ নিয়ে ছেড়ে দাও, ৩২ থেকে তার কান্নার শব্দে যেন আওয়ামী লীগের ঘুম ভাঙে!’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল ক্ষুব্ধ জনতা।
এদিকে, জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। একই আদেশে দোষ স্বীকার করা রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে আইনজীবীরা ছাড়াও জুলাই আগস্টে নিহতদের কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



