জুমবাংলা ডেস্ক : তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ তো আছেই, আরো আছে মানবপাচার ও মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ। এসব অভিযোগে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে তিনি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ভিন্ন নামে জাল পাসপোর্ট করে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন।
র্যাব-পুলিশ ও এলাকার লোকজনের কাছে থেকে যাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাঁর প্রকৃত নাম আব্দুল গণি।
গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চরগোয়ালদী এলাকায়। তিনি মৃত আশেক আলী ও শরিফুন নেছার ছেলে। তবে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে তরিকুল ইসলাম, আল আমিন, ডালিম বা ওসমান গণি নাম ব্যবহার করেছেন তিনি।
নানা কৌশলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে ফাঁকি দিয়ে জাল কাগজপত্রে পাসপোর্ট তৈরি করেন তিনি।
এর আগে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে দুইবার র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধে জড়িয়েছেন তিনি। জাল কাগজ ব্যবহার করে নতুন নামে পাসপোর্ট করিয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন।
যেভাবে গণির প্রতারণা শুরু
র্যাবের তথ্য মতে, নব্বইয়ের দশকে মালয়েশিয়া যান গণি। সেখানে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
একসময় তাঁর পাসপোর্ট কালো তালিকাভুক্ত করে তাঁকে মালয়েশিয়া থেকে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। দেশে ফিরে তরিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির পাসপোর্টে নিজের ছবি লাগিয়ে আবার পাসপোর্ট করেন। বদলে দেন মা-বাবার নামও। এরপর মালয়েশিয়া গিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সেখানে ওয়ার্ক পারমিট পাইয়ে দেওয়ার নামে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন।
টাকা ফেরত চাইলে মালয়েশিয়ায় অনেক বাংলাদেশিকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় নতুন মামলায় জড়িয়ে একসময় তিনি মালয়েশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন। দেশে ফিরে আবার প্রতারণা শুরু করেন।
দুইবার র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার
প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আব্দুল গণিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করে তারা। কয়েক মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এরপর মানবপাচার ও প্রবাসীদের জিম্মি করে টাকা আদায় চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে করা আরেকটি মামলায় গণিকে গত বছরের ২৩ মে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, ‘মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে প্রতারণা, অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগে প্রথমে ২০২২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার কাঁচপুর ব্রিজ থেকে আব্দুল গণিকে আটক করি। তাঁর পাসপোর্টে অন্য নাম দেখে বিষয়টি নিয়ে সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করি। এক পর্যায়ে আব্দুল গণি তাঁর পরিচয় জালিয়াতির কথা স্বীকার করলে তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করি। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ভুল প্রতিবেদন দেন। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে আদালতে নারাজি দিলে ফের তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।’
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের মে মাসে বরিশালের গৌরনদী থানায় করা একটি মানবপাচার মামলায় আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে শুনেছি, তিনি জামিনে বেরিয়ে দেশ ছেড়েছেন।’
গত বছরের ১২ এপ্রিল গৌরনদী থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘তদন্তে বাদীর অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি এবং আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’
যেভাবে পাসপোর্টে নাম পাল্টান গণি
গৌরনদী থানায় মানবপাচারের অভিযোগে করা মামলার পর পালিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন গণি। এ সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর জামিনে বেরিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুমের স্বাক্ষর জাল করে নানা যোগসাজশে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেন। সেটি ব্যবহার করে নতুন পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ছাড়েন। নতুন পাসপোর্টে তাঁর নাম ওসমান গণি ওরফে তরিকুল ইসলাম। এতে জীবিত পিতাকে মৃত দেখানো হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গণি জাল কাগজপত্র করে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। যা আমাদের সার্ভারে নেই। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি ইমিগ্রেশন পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমরা চাই, দ্রুত গ্রেপ্তার হয়ে তাঁর শাস্তি হোক।’
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হুমায়ূন কবির বলেন, ‘তদন্তের পর আমরা তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (র্চাজশিট) দিয়েছি, সে দোষী। তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
পিরোজপুর ইউপি সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘থানা-পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে বিষয়টি জানিয়েছি। জাল প্রস্তুতকারীর শাস্তি নিশ্চিতে চেষ্টা করছি। আমরা চাই, দ্রুত তাঁর শাস্তি হোক।’
জাল জন্ম সনদে পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা শুধু দেখি জন্ম সনদ আছে কি না। যেখানে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ আবেদন জমা পড়ছে, সেখানে জন্ম সনদ সঠিক কি না, পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ নেই।’ তবে এ ধরনের অভিযোগ থাকলে সেটা আমলে নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।