জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘ ২০ বছর পর জন্মভূমি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত এবং পৃথিবীর বিখ্যাত চালকবিহীন হেলিকপ্টার ও বিমানের আবিষ্কারক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবির।
শুক্রবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামে অবতারণ করে।
এসময় তাকে স্বাগত জানাতে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক আব্দুল মান্নানসহ গ্রামের হাজারো মানুষ।
এর আগে বুধবার (২২ মে) স্ত্রী ফরিদা কবিরসহ তিনি বাংলাদেশে আসেন। তিনি ৩১ মে পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা সার্কিট হাউসে থাকবেন।
সবশেষ ২০০৪ সালের ৫ মার্চ তিনি কিশোরগঞ্জে এসেছিলেন। সেসময় তাকে পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীতে নাগরিক গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবিরের বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের নাগেরগ্রামে হলেও শৈশব ও কৈশোর কেটেছে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামের নানার বাড়িতে। কারণ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হওয়ায় তাকেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবির কর্মরত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় অগাস্টা এরোস্পেস কর্পোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে। তিনি বিশ্বের প্রথম রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টারের উদ্ভাবক।
বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির ১৯৮৬ সালে রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার আবিষ্কার করেন। ফিলাডেলফিয়ায় অগাস্টা এরোস্পেস কর্পোরেশনে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পে নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন।
বিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন কবির ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপে প্রথম হন। বিভিন্ন বাড়ি লজিং থেকে ১৯৭০ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকেও কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট করেন। পরে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। গণিত শাস্ত্র ও গবেষণার প্রতি তার আকর্ষণ ছিল বেশি। তাই ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ না করেই তিনি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএস করার জন্য ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটনে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. হুমায়ুন কবীর এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- এ স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি অর্জন করেছেন। হুমায়ুন কবির ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে। তার গবেষণার বিষয় ছিল মহাশুন্যযান ও রকেট বিজ্ঞান।
১৯৮৬ সালে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আবিষ্কার করেন রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক আব্দুল মান্নান জানান, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবীর সম্পর্কে আমার নাতি হয়। ছোটবেলায় থেকেই সে অসম্ভব মেধাবী ছিল। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সংসার চালানোর জন্য নানার সঙ্গে রাস্তার মোড়ে কেরোসিন বিক্রি করতো। অসম্ভব মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণে আজ তিনি বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত।
বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির জানান, বাংলাদেশে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। ৩০ মে পর্যন্ত দেশে থাকবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।