বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি মহাকাশে নতুন এক অণুর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
‘ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)’র অধ্যাপক ব্রেট ম্যাকগুয়ারের নেতৃত্বে গবেষকরা মহাকাশে এমন একটি নতুন অণুর খোঁজ পেয়েছেন, যা আমাদের মহাবিশ্ব বোঝার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস’-এ, যেখানে ‘২-মেথোক্সিথানল’ নামের এক জটিল অণু সম্পর্কে তথ্য উঠে এসেছে। আর এর খোঁজ মিলেছে এমন এক অঞ্চলে, যেখানে মূলত তারার উৎপত্তি ঘটে থাকে।
এ চমকজাগানো অনুসন্ধানে জন্য এমআইটি থেকে শুরু করে ফ্রান্স, ফ্লোরিডা, ভার্জিনিয়া ও কোপেনহেগেনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকদেরকে সমন্বিত করেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও এমআইটি’র স্নাতক শিক্ষার্থী জাখারি টি.পি. ফ্রাইড।
মহাকাশে অজানা কিছু খুঁজে পেতে অধ্যাপক ম্যাকগুয়ারের গবেষণা দলটি নক্ষত্র ও গ্রহ গঠনের জন্য নির্ধারিত মহাকাশ অঞ্চলে এ অণু চিহ্নিত করার ওপর মনযোগ দিয়েছিল।
এই গবেষণায় ঘূর্ণন বর্ণালী বা বিভিন্ন অণুর ঘূর্ণন থেকে নির্গত বিশেষ ধরনের আলোর নমুনা পরীক্ষা করে গবেষণা দলটি মহাজাগতিক বস্তুটির আণবিক ‘পদচিহ্ন’ বা ‘বারকোড’ শনাক্ত পেরেছেন বলে উঠে এসেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে।
এই নতুন অণুর সন্ধান পেতে গবেষকরা প্রথমে এক পরীক্ষাগারে এদের বর্ণালী পরীক্ষা করে এতে কী ধরনের অণু থাকতে পারে, তা অনুমানের চেষ্টা করেন।
এর পর গবেষকরা শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মহাকাশে এইসব প্যাটার্ন নিয়ে খোঁজ শুরু করেন। সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর, বিশেষ করে মেশিন লার্নিং কৌশলের সহায়তায়।
এ যুগান্তকারী অনুসন্ধানে গবেষণা দলটি ‘২-মেথোক্সিথানল’কে লক্ষ্যবস্তু বানায়, যা এর আগে মহাকাশে চিহ্নিত যে কোনো ‘মেথক্সি’ শ্রেণির অণুর চেয়ে জটিল।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বাঁধার মাধ্যমে গবেষকরা বিস্তৃত পরিসরে এ অণুর ঘূর্ণন বর্ণালী পরিমাপ করার সুযোগ পেয়েছেন।
গবেষণাটির খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করার পর মহাকাশে ‘২-মেথোক্সিথানল’ খুঁজতে গবেষকরা ‘অ্যাটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (অ্যালমা)’ নামের রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন।
গবেষণা দলটির এ কঠোর পরিশ্রমের সুফলও মিলেছে, যেখানে তারা-গঠনকারী অঞ্চল ‘এনজিসি ৬৩৩৪১’-তে ‘২-মেথোক্সিথানল’-এর ২৫টি ঘূর্ণন রেখা শনাক্ত করে এই অণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করেন তারা। এ অঞ্চলটি মূলত বিভিন্ন নতুন ‘তারার নার্সারি’, যা এই ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যে কোনো নতুন জটিলতা বোঝার ক্ষেত্রে, ১৩টি ভিন্ন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত ‘২-মেথোক্সিথানল’-এর অণুর এ খোঁজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এগুলো এমন একট ছোট দলের অংশ, যেগুলোর অবস্থান আমাদের সৌরজগতের বাইরে। আর এদের বেশিরভাগই দেখতে রিং আকৃতির।
এ ধরনের একটি জটিল অণুর সন্ধান থেকে মহাকাশে বিভিন্ন বস্তুর আণবিক জটিলতা সম্পর্কে নতুন তথ্য খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে নক্ষত্র গঠনের রসায়ন সম্পর্কেও তথ্য মিলতে পারে।
এ ছাড়াও, একটি তারা-গঠনকারী অঞ্চলে ‘২-মেথোক্সিথানল’ পাওয়া গেলেও আরেক তারা-গঠনকারী অঞ্চল ‘আইআরএএস ১৬২৯৩২৪২২বি’-এ তা পাওয়া যায়নি। এর পাশাপাশি, কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি মহাকাশের রাসায়নিক নানা প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে, তা পরীক্ষা করার বিশেষ সুযোগ মিলেছে এ গবেষণায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।