আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আলোচনার টেবিলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের লক্ষ্য ইউক্রেনের অবস্থানকে শক্তিশালী করা হলেও শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে ভূখণ্ড ছাড় দেওয়াসহ সমঝোতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে কিয়েভকে। রোববার (১২ জুন) ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে পশ্চিমাজোট ‘মূল্য দিতে ইচ্ছুক’ হলেও চলমান সংঘাত থামাতে কিয়েভকে তার ভূখণ্ড থেকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ন্যাটো প্রধান।
তিনি বলেন, “শান্তি সম্ভব। তবে এখানে প্রশ্ন হলো, শান্তির জন্য আপনি কতটুকু ছাড় দিতে ইচ্ছুক? কতটা ভূখণ্ড, কতটা স্বাধীনতা, কতটা সার্বভৌমত্ব… শান্তির জন্য আপনি কতটা আত্মত্যাগ করতে রাজি?”
তবে ইউক্রেনকে কী ধরনের শর্তাবলী গ্রহণ করতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি স্টলটেনবার্গ। এদিকে, ইউক্রেনের সমর্থনে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে ন্যাটো এবং পশ্চিমা মিত্রশক্তি। এরপরেও বিবাদ নিষ্পত্তিতে আলোচনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ন্যাটো প্রধান সরাসরি ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড অধিগ্রহণের কথা না বললেও বক্তৃতায় তিনি ফিনল্যান্ডের উদাহরণ টেনে আনেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিনল্যান্ড তার কারেলিয়া ভূখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়নকে ছেড়ে দিয়েছিল। স্টলটেনবার্গ তৎকালীন ওই ফিনিশ-সোভিয়েত চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, “মূলত এর মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে বেঁচে একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে ফিনল্যান্ড।”
রুশ বার্তাসংস্থা রাশিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন এবং ব্রিটিশ কর্মকর্তারা চলমান সংঘাতে প্রকাশ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জয়ের ওপর জোর দিলেও আদৌতে তারা ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে, নিজেদের মধ্যেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিএনএন-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং ব্রাসেলসের কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি মীমাংসার পরিকল্পনা করার চেষ্টায় ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষকে বাদ দিয়েই বৈঠক করছেন।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এ কথা স্বীকার করেছেন, কিছু দেশ ইউক্রেনকে আপোসমূলক আলোচনা বা সমঝোতার দিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ তারা ‘যুদ্ধে ক্লান্ত’ হয়ে পড়েছে। তবে সেসব দেশের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো সংঘাত থামাতে জেলেনস্কিকে ভুখণ্ডের কিছু অংশ ছাড় দেওয়ার আহ্বানের বিষয়টি প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছেন। গেল মাসে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে একই পরামর্শ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার।
সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির জন্য বেশ কয়েকবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার সঙ্গে মীমাংসায় পৌঁছাতে বহুবার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে এর সঙ্গে সঙ্গেই আবার তাকে বিপরীত সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে। গেল মাসের শেষের দিকে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন জেলেনস্কি। এর পরক্ষণেই আবার ইউক্রেনীয়দের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, ‘ডনবাস প্রজাতন্ত্রে কেবল ইউক্রেনের পতাকাই উড়বে’।
রোববারের বক্তব্যে ফিনিশ প্রেসিডেন্ট নিনিস্তো বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি, এতটা লড়াইয়ের পর ইউক্রেনের পক্ষে নিজেদের ভুখণ্ডের অংশ ছেড়ে দেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু রাশিয়ার পরাজয় এই মুহূর্তে নিশ্চিত নয়। এভাবে শান্তি অর্জনের চেষ্টা সতিই কঠিন।”
সূত্র: রাশিয়া টুডে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।