বিজ্ঞান ও প্রযুকি্ত ডেস্ক: প্রথমবারের মতো নিরাপত্তা নজরদারি সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু করলো বাংলাদেশ। শুক্রবার (২৫ মার্চ)গাজীপুরের কালিয়াকৈরস্থ বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’তে বাংলাদেশের প্রথম নিরাপত্তা নজরদারী সরঞ্জামের উৎপাদন কারখানা উদ্বোধন হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ প্রধান অতিথি হিসেবে এই কারখানার উদ্বোধন করেন।
এতে বিশ্বের এক নম্বর নিরাপত্তা নজরদারি সলিউশন ব্র্যান্ড ‘হিকভিশন’-এর অত্যাধুনিক নিরাপত্তা নজরদারি যন্ত্রপাতি তৈরি হবে। বাংলাদেশে হিকভিশনের প্রথম ও জাতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক্সেল টেকনোলজিস লিমিটেড-এর সহযোগী কোম্পানি এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লিমিটেড বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির সেবা ভবনে প্রাথমিক পর্যায়ের এই কারখানা স্থাপন করেছে। চীনের শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা নজরদারি সমাধান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিকভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি কোম্পানি এতে কারিগরী সহায়তা দিচ্ছে। সরজমিন কারখানা ঘুরে দেখা যায়, উন্নতমানের নিরাপত্তা ক্যামেরা তৈরি করতে। আপাতত ৩৫ জন প্রশিক্ষিত কর্মী কাজ করছেন। শিগগিরই উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষিত কর্মীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম সাহা বলেন, মাসে ৩০ হাজার পিস নিরাপত্তা ক্যামেরা তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। তবে আপাতত মাসে ১০টি মডেলের নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ১২শ’ থেকে ১৫শ’ পিস তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই এর পরিমাণ আরও বাড়বে। তাছাড়া পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে এখানে অন্যান্য ব্র্যান্ডের ডিজিটাল ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং, টেলিকম, এআই ও রোবটিক্স যন্ত্রপাতি উৎপাদন করা হবে। তিনি বলেন, ভারতের পর বাংলাদেশে নিরাপত্তা সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য-মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডকে বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেদের দেশের বাজারের পাশাপাশি এশিয়া ও আফ্রিকায় আমাদের তৈরি পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
গৌতম সাহা বলেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা সরঞ্জামাদির বাজার দিন দিন বাড়ছে। আর এসব পণ্যের বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করছি। এই বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশে এ ধরনের পণ্যের কারখানা দেয়ার উদ্যোগ নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের এ বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লিমিটেডের পরিচালক মাসুদ হোসেন বলেন, প্রথমদিকে চীনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম নিরাপত্তা সরঞ্জমাদি তৈরি করতে কারিগরি সহায়তা করে। তারা আমাদের বাংলাদেশের কিছু তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণরাই আমাদের নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি তৈরি করছেন।
তিনি বলেন, হাইটেক পার্কে দুই একর জমির ওপর নিজস্ব কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এক বছরের মধ্যে তা শেষ হবে। তখন ওই কারখানায় প্রায় এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এদিকে গতকাল নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি কারখানার উদ্বোধন করেন তথ্য ও যাগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং হিকভিশন সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট হুগো হুয়াং। সভাপতিত্ব করেন এক্সেল টেকনোলজিস লিমিটেড এবং এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম সাহা। অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের টেকসই হাইটেক ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম নির্মাণের এখনই উপযুক্ত সময়।
মহামারী কোভিড-১৯ পরবর্তী বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এই উপযুক্ত সময় সদ্ব্যবহারের অবারিত সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি এক্সেল কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে প্রথম নিরাপত্তা নজরদারী সরঞ্জামের উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য ধন্যবাদ জানান। অদূর ভবিষ্যতে এই কারখানার কলেবর বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ফ্লাগশিপ প্রকল্প হচ্ছে কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির উপর স্থাপিত ্তুবঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি। এখানে এ পর্যন্ত ৮০টি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিকে জমি ও বিল্ডিং স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া দুইটি ডেভেলপার কোম্পানিকে জমি উন্নয়ন এবং উচ্চ প্রযুক্তিবান্ধব শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে যুতসই স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসব জায়গায় হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, আইওটি, বিপিও, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমন্ট, ডাটা সেন্টার পভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলো কাজ করবে। তিনি বিনিয়োগকারী হিসেবে এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লিমিটেডের অগ্রণী উদ্যোগের প্রশংসা এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে হিকভিশন সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট হুগো হুয়াং বলেন, আজ হিকভিশনের জন্য একটি অত্যন্ত খুশির দিন। কারণ, চীনের বাইরে প্রথম ভারতে এবং দ্বিতীয় একমাত্র বাংলাদেশে আমাদের ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদন শুরু হলো। এতে কারিগরী সহায়তা দান করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হওয়া এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা সবরকমের সহায়তা প্রদান করে য যাবো।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ এবং হিকভিশন সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট হুগো হুয়াং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এক্সেল টেকনোলজিস্ লি. এবং এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম সাহা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বৃহদাকারে নিরাপত্তা নজরদারি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কিং, টেলিকম, এআই ও রোবটিক্স যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য কারখানা স্থাপনে এক্সেল ইন্টেলিজেন্ট সলিউশন্স লিমিটেডের নামে ইজারা দেয়া দুই একর জমির মাটি ভরাটসহ উন্নয়ন কাজের সূচনা করা হয়।
একটি সিম থেকেই ব্যবহার করা যাবে 2টি নাম্বার! আসল পদ্ধতি জানুন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।