জুমবাংলা ডেস্ক : সাফল্যের গল্পগুলো বরাবরই ব্যতিক্রমধর্মী। জীবনে কঠিন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে সাফল্যের উচ্চতর শিহরে আহরণ করা সচরাচর কঠিন। তবে এই কঠিন পথের বাধা পাড়ি দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এম এ মোত্তালিব মিহির।
৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। জীবিকার তাগিদে একসময় নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি থেকে শুরু করে প্রুফ রিডার ও টিউশনি ছিল জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বর্গাচাষি মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির সন্তান মোত্তালিব। বাবা বর্গাচাষি আর মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সংসারের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তিনি। মাধ্যমিক পাস করার পর উচ্চ মাধ্যমিকে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরে শুরু হয় তার জীবনের কঠোর সংগ্রাম। অর্থের অভাবে বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল পড়ালেখা। জীবিকা নির্বাহ এবং পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরিও করতে হয়েছিল।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২০১২ সালে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর শুরু করেন কাজ, বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নিয়ে টানা ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো তাকে। তবে মেধাবী মোত্তালিবের মন পড়ে থাকত সবসময় পড়ার টেবিলে। কিছু বুঝতে না পেরে মোত্তালিব দেখা করেন তার এক বন্ধুর সঙ্গে। এরপর বন্ধুর পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির কথা শুনে মনে ইচ্ছে জাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। চাকরির টাকা জমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হন। এরপর চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে মোত্তালিব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ হন।
নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যান এবং ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপরই শুরু হলো তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা কাজ করে কলাবাগান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে ক্লাস করতে হতো তাকে। ভাড়া বাঁচানোর জন্য নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই যাতায়াত করতেন তিনি।
জীবনের সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে মোত্তালিব মিহির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিরাপত্তা প্রহরী এবং টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। কখনো কখনো টানাপোড়েনের মাঝেও হতাশ হয়নি। মহান আল্লাহর উপর ভরশা করে সুদিনের আশায় সব কষ্ট নিমেষেই মেনে নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শত বাধা পেরিয়ে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনো হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি, যেখানে ছেলেমেয়েদের নাম-দস্তখত শেখার পরে স্বপ্নই থাকত বিদেশ চলে যাবে। এ রকম একটা পরিবেশে স্বপ্ন দেখতাম। আমি একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনো ভাবিনি যে বিসিএসের মতো এত প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির একটা চাকরি করব।’
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, তাদের উদ্দেশে মোত্তালিব বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের, তার চেয়ে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে, একদিন সফলতা আসবেই ইনশাল্লাহ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।