জুমবাংলা ডেস্ক : একসময় ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠা বাণিজ্যকভাবে একটি লাভজনক ফল হিসেবে লটকন সুপরিচিত। ‘ইংরেজিতে বার্মিজ গ্রেপ’ নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে এই লটকনের কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন বুগি, বুবি, হাড়ফাটা, ডুবি, কানাইজু, লকটা, লটকাউ, কিছুয়ান ইত্যাদি। টক, মিষ্টি, পুষ্টি এবং ঔষধিগুণসহ বিভিন্ন গুণে ভরপুর হলুদ রঙের এই ফলটি। প্রচুর খাদ্যশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও কার্যকর। এই লটকনে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড ও এনজাইম। যা দেহ গঠনে কোষকলার সুস্থতায় সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশের নরসিংদী এলাকার লটকন দেশে সমাদৃত। নরসিংদীতে এই লটকন চাষ করে স্বাবলম্বী মনোহরদীর কৃষক তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তোতা। দেশে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রায় ১০৫ শতাংশ জমিতে এই লটকন চাষ করেছেন তিনি। তোতার এই লটকন বাগানে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে উঁচু ডাল পর্যন্ত ধরে থোকায় থোকায় পাকা লটকন। তাছাড়া বিদেশের বাজারেও দিন দিন বাড়ছে এর প্রচুর চাহিদা।
লটকন চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, ১৭ বছর পূর্বে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মনোহরদী পৌরসভার খালের ঘাট বাজার সংলগ্ন বাবার পৈতৃক জমিতে এই লটকনের বাগান গড়ে তুলেছি। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের গাছও রয়েছে বাগানে। লটকনের চারা রোপণের বছর তিনেকের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। বাগান থেকেই পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে লটকন। বাজার ভালো থাকায় এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। তবে চলতি মৌসুমে এই লটকন বাগান থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বাগানের পরিচর্যায় সর্বদা ব্যস্ত থাকেন তোতা নিজেই।
এই লটকন চাষ করে তোতা স্বাবলম্বী। বাগানের এই লটকন বিক্রির আয় থেকে ২৪ লাশ টাকায় একটি বাড়ি ক্রয়সহ নাতি ও নাতনিদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করে পেরেছি। একই সঙ্গে চলছে সংসারের খরচও। লটকনের গুণগত মান বৃদ্ধিসহ নানান দিকনির্দেশনায় পরামর্শ নিচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের। একজন ভালো চাষি হিসেবে নজরও কেড়েছেন মনোহরদী কৃষি অফিসের বলে জানান তোতা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুনা আক্তার বলেন, লটকন চাষে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। ছায়াময় জায়গায় ভালো হয় লটকন গাছ। অন্যান্য ফলদ বৃক্ষের সঙ্গে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারে। মনেহরদীর মাটি লটকন চাষের জন্যে উপযোগী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি-২। লটকনে রক্তশূন্যতা কমায়, এর পাতার শুকনো গুঁড়া ডায়রিয়া উপসর্গ করে এবং মানসিক চাপ কমায়। মনোহরদী উপজেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ২০৫ টন লটকন উৎপাদিত হয়। উপজেলা কৃষি অফিস লটকন চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। মনোহরদী উপজেলা লটকন চাষে দ্রুত সম্প্রসারণ এবং অনেক কৃষক লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।