জুমবাংলা ডেস্ক : নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০২০ সালে চাকরিচ্যুত হন বিজিবি সদস্য শাহজাদা আলম। এর পর তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ ও চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। গত বছর তিনি যুক্ত হন জাল টাকার কারবারে। আর এ বছরের জানুয়ারিতে নিজেই গড়ে তোলেন জাল টাকা তৈরির চক্র। এই চক্রটি ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জাল টাকা বিক্রি করে আসছিল।
জাল টাকা তৈরি চক্রের হোতা শাহজাদাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য জানায় র্যাব-৩। এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরখানের উজাপাড়া (মাস্টারপাড়া) এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অপর দু’জন হলেন– তাঁর সহযোগী মাহেদী হাসান ও আবু হুরায়রা ওরফে তুষার। অভিযানে ২ লাখ টাকার জাল নোট, তৈরির মেশিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে গতকাল দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রির পেজে শাহজাদার সঙ্গে পরিচয় হয় মাহেদী ও তুষারের। তাদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন জাল টাকা তৈরির নতুন চক্র। দুই সহযোগীকে তিনি তাঁর উত্তরখানের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখান থেকেই তাঁরা কার্যক্রম চালান। সম্প্রতি গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা ওই বাসা ছেড়ে গাজীপুরের আরেকটি বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অধিনায়ক জানান, মাহেদী ফটোশপ ও গ্রাফিক্সের কাজ জানতেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইউটিউব থেকে জাল টাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে তিনি কাজ শুরু করেন। তুষার অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই জাল টাকা কেনাবেচা করে আসছিলেন। তাঁরা প্রথমে অনলাইন থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন নোটের ছবি ডাউনলোড করেন। পরে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে ছবিগুলোর দুই পিঠ সমন্বয় করে মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করেন। সেই কাগজে সোনালি রঙের মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করা হয়। সবশেষে স্টিলের স্কেল ও এন্টিকাটারের সাহায্যে জাল নোটগুলো কেটে বান্ডিল বানিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করতে তাঁরা লিপি গোল্ড কাগজ বেছে নেয়। এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের আনুমানিক ২০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা তৈরিতে খরচ ২ হাজার টাকা।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, জাল নোট বিক্রির জন্য শাহজাদা ও তুষার ফেসবুকে জাল টাকা কেনাবেচার বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে পোস্ট দেন। গ্রুপগুলো হলো– এ গ্রেড জাল নোট, টাকা চাই, জাল নোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস, টাকা বিজনেস ইত্যাদি। সেখানে পোস্ট দেখে কেউ যোগাযোগ করলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে এবং নিরাপদ স্থানে জাল টাকা হস্তান্তর করে। চক্রটি এ পর্যন্ত জাল টাকার বড় চারটি ডেলিভারি দিয়েছে বলে জানায়। এর মধ্যে গত ১৫ জুন ৫ লাখ টাকার (৫০০, ২০০ ও ১০০ টাকার নোট) জাল নোট ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আর সর্বশেষ সোমবার রাতে ২ লাখ টাকার জাল নোট ডেলিভারির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।