জুমবাংলা ডেস্ক : সারা দেশে ভুয়া পেজ খুলে অনলাইনে চাঁদপুরের ইলিশের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করছে প্রতারকচক্র। এতে ক্রেতারা বিকাশ বা নগদে টাকা পাঠানোর পর পাচ্ছেন না ইলিশের দেখা। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারকচক্র। চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনলাইনে অর্ডার করলে কুরিয়ারে ইলিশ মাছ পাঠানোর পর টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পেজ নকল করে সারা দেশে প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। তারা আগেই টাকা হাতিয়ে নেয়।
এরইমধ্যে চাঁদপুরে ৪০ থেকে ৪৫টি বৈধ অনলাইন ব্যবসায়ীর তালিকা করে অবৈধদের রোধ করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
ভুয়া অনলাইন পেজ খুলে নামিদামি মডেলদের নকল ভিডিও বার্তা, লোভনীয় অফারে ক্রেতা আকৃষ্ট করে বিক্রি করা হচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ। দর-দামের পর দ্রুত বিকাশে অগ্রিম লেনদেন করে অর্ডার নিশ্চিতের পর সেই মোবাইল নম্বরটি ব্লক করে দেয় প্রতারকচক্র। প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের অনেক ক্রেতা। তবে ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমে চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রির কথা জানান বৈধ অনলাইন ব্যবসায়ীরা।
চাকরির কারণে পাবনা থেকে চাঁদপুর মাছঘাটে আসেন রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটু কনফিউজড হওয়ার কারণে সরাসরি চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছি। আসার পরে ১১৪ নম্বর দোকান কোনটা এখানে কেউই সেভাবে বলতে পারছে না। এখানে ১১৪ নম্বর দোকান বলতে কোনো দোকানই নেই। বরং নম্বরিং করা কোনো দোকানই নেই এখানে। ওনারা ডিসকাউন্টের অফার দিয়েছে। ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে মাছ দেবে বলে জানিয়েছে, সারা বাংলাদেশে কুরিয়ার করছে। আমি ওই অনুযায়ীই এসেছি। এখানে এসে একটা কল করেছি। প্রথমবার কল রিসিভ করেছে। আমি বলেছি, আমি তো চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছি, আপনি আসেন। আমি ১১৪ নম্বর দোকান খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি কোথায়? তারপর কলটা কেটে দিয়েছে। আর কল রিসিভ করেনি। আমার নম্বরটা ব্লক করে দিয়েছে।’
চাঁদপুর মাছ ঘাটের এক বৈধ অনলাইন ব্যবসায়ী বলছেন, ‘যারা প্রতারণা করে, তারা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বৈধ অনলাইন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমার পরিবারেই আমার আত্মীয়-স্বজনও প্রতারিত হয়েছে। তারা জানিয়েছে একজনের ছয় হাজার, আরেকজনের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে, তবে তাদেরকে মাছ দেয়নি।’
ওই ব্যবসায়ী আরও বলছেন, ‘আসলে যারা প্রতারক তারা আমাদের পেইজগুলোকে কপি করে। কারণ আমরাই সর্ম্পূর্ণ ক্যাশ অন ডেলিভারিতে মাছ দেই সারা বাংলাদেশে। এগুলো কপি করে ফ্রি বুস্টিং করে বিভিন্ন অফার দেয়। অফারগুলো এ রকম, এক কেজি মাছ ৫০০ টাকা, দুই কেজি মাছ ১ হাজার টাকা!’
ব্র্যান্ডিং জেলা চাঁদপুরের ইলিশের সুনাম দেশ-বিদেশে। সেই ইলিশ, ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় অনলাইন বিক্রেতাদের যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে সম্প্রতি বৈধ বিক্রেতাদের তালিকা জমা দিয়েছে মৎস্য বণিক সমিতি।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল বারী মানিক জমাদ্দার বলছেন, ‘গত দুই বছর যাবৎ আমাদের কাছে এ অভিযোগ আসছে যে, অনলাইনে মাছ বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা জেলা পুলিশের সঙ্গে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতি কাজ করেছি। আমাদের এখানে যে অনলাইন ব্যবসায়ী আছে, সমিতির পক্ষ থেকে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করেছি এবং একজন সদস্যের রেফারেন্স নিয়ে তাদেরকে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছি। এই লিস্ট অনলাইন ব্যবসায়ীদের তালিকা জেলা পুলিশের কাছে আছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে আছে। তারপরেও প্রান্তিক ভোক্তা যারা, তারা যেন প্রতারিত না হয়, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। কিছুদিনের মধ্যে আমরা চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে অনলাইন ফেসবুক পেজ খুলব, যাতে মানুষ প্রতারিত না হয়।’
এদিকে প্রতারিত ব্যক্তিদের দেওয়া অভিযোগের মোবাইল নম্বরগুলো বেশিরভাগ অন্য অঞ্চলের, চাঁদপুর এলাকার না। এসব প্রতারণা ঠেকাতে চাঁদপুর অঞ্চল থেকে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের ভেরিফায়েড পেজে থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে কিনলে ক্রেতারা প্রতারিত হবেন না। যদি প্রতারণা হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘অনলাইন প্রতারণার ব্যাপারে আমাদের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি, তদন্তও করা হচ্ছে। তবে আমরা বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর বের করতে পেরেছি। যেগুলো আসলে চাঁদপুর এলাকার না। এ ব্যাপারে আমরা সাধারণ মানুষকে বলব যে, অনলাইনে আসলে আপনারা যাচাই না করে ইলিশ মাছ কিনতে যাবেন না। আমরা যে লিস্টগুলো দিয়েছি, চাঁদপুর অঞ্চল থেকে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার স্যার ভেরিফায়েড পেজ থেকে যে ৪০ থেকে ৪১টা প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছে, সেখান থেকে কিনলে আপনারা প্রতারিত হবেন না বলে আমরা আশা করি। আর যদি প্রতারণা হনও আমরা তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারব।’
ফ্রেশারদের চাকরির সুযোগ দিচ্ছে ইস্টার্ন ব্যাংক, আবেদন যেভাবে
চাঁদপুর মাছঘাট থেকে প্রতিদিন অনলাইনে ইলিশ বিক্রির তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীরা তিন শ থেকে ছয় শ মণ পর্যন্ত ইলিশ মাছ ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। এরইমধ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ‘অনলাইনে ইলিশ ক্রয়ে প্রতারক হতে সাবধান!’ হওয়ার জন্য একটি সতর্কতা বার্তা ও হটলাইন নম্বর (০১৩২০১১৬৮৯৮) দিয়ে প্রচার শুরু করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।