জুমবাংলা ডেস্ক : এক কেজি আলু ও পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ যথাক্রমে ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা ও ২৩ টাকা ৮৭ পয়সা। অথচ হাতবদল হয়ে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে। এটা কতটুকু যৌক্তিক, তা দেখার যেন কেউ নেই!
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ৩ বছর ধরে ব্যবসা করছেন সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আশরাফুল। দৈনিক তার বিক্রি ৫০ কেজি বেগুন। তিনি জানান, প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। অথচ কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব বলছে, এক কেজি বেগুনের উৎপাদন খরচ মাত্র ১০ টাকা ২৬ পয়সা।
এ সম্পর্কে মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ‘মোকামে বেগুনের দাম বেশি। কৃষক তো তেমন একটা দাম পায় না। আমাদের দেশে যারা পণ্য উৎপাদন করে, তাদের কোনো দাম নাই।’
গত বছর মৌসুমের শুরুতে অর্থাৎ মার্চে কৃষকরা প্রতিকেজি আলু বিক্রি করেছিলেন ২০ টাকার কমে। যদিও জুনের পর কৃষকের কাছে বীজ আলু ছাড়া অবশিষ্ট থাকে না কিছুই। তবে সিংহভাগই মজুত করেন হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। জুনে আলু বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে জুনে ৮ শতাংশ, জুলাই ও আগস্টে ১০ শতাংশ করে, সেপ্টেম্বরে ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ৩০ শতাংশ, নভেম্বরে ২০ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ২ শতাংশ আলু হিমাগার থেকে বিক্রি হয়। কিন্তু ১৫ টাকা ৯৫ পয়সায় উৎপাদিত আলুর যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩৬ টাকা, সেখানে প্রতিকেজি আলু পাইকারিতেই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়।
গত বছর সেপ্টেম্বরের ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশীয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো হয়। পুরানো কায়দায় জনগণের পকেট কেটেছেন অনেকে। সংকট দেখিয়ে হালি পেঁয়াজের দাম ওঠে শতকের ঘরে। মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে কৃষক থেকে পণ্য কিনে মজুত করেছেন। পরে তারা সেগুলো ধীরে ধীরে দাম বাড়িয়ে বাজারে ছাড়েন। এখন সময় শুধু মুড়িকাটা পেঁয়াজের। থাকবে আরও এক মাস।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে এক ক্রেতা বলেন, ২০ থেকে ২৫ টাকা মূল্যের পেঁয়াজের কেজি ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এটাই বাস্তব, কোনো মুখের কথা নয়। তা ছাড়া এখন যদি ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে থাকত তাহলে দাম কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত।
কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে আসতে কৃষিপণ্য তিন-চার হাত বদল হয়। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে লাভের সব টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, এবার কৃষক পর্যায় থেকে বাজারের সাপ্লাই চেইন পর্যন্ত কাজ করবে তারা। একই সঙ্গে রমজানে কেউ যেন কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে নজর থাকবে।
সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, পরিবহন সমস্যা। পণ্য পরিবহনে যে অতিরিক্ত খরচ পড়ছে। কৃষক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগীরা কী পরিমাণ লাভ করছে, আমরা সব স্তরে নজরদারি করছি। রমজানে যেসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, আমরা বর্তমানে সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
সরকারি সংস্থার কড়া হুঁশিয়ারি আর বাজার মনিটরিং চলছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। ক্রেতারা বলছেন, সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক রাখতে অসাধু চক্রকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।