জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি চাকরি যেন সোনার হরিণ। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বছরের পর বছর সরকারি চাকরির জন্য দৌড়ানো ব্যক্তির কাছে যেকোনো চাকরিতে সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়া যেন অমাবস্যার চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচানো আর সমাজের চোখে নিজের মর্যাদা রক্ষার লড়াই চাকরি না পাওয়া তরুণ কিংবা তরুণীটির চেয়ে ভালো কে উপলব্ধ করতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরি না নিয়ে বাড়ি ফেরার লজ্জায় কতজন প্রতিনিয়তই পুড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভালো মানের সরকারি চাকরি ছেড়ে এসে অনিশ্চিত বিসিএসের ভাইভায় অংশ নেওয়ার ঝুঁকি শুধু প্রচণ্ড রগচটা তরুণই নিতে পারেন। এ পথে সফলতার নিশ্চয়তা নেই। তবে এমন ঝুঁকি নিয়েই ৪৩ বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন সাগর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ওমর ফারুক সাগর। নিজের স্বপ্ন পূরণের ত্যাগ করেছেন অনেক কিছুই। ছাত্র জীবনে শিকার হয়েছেন প্রতিহিংসার। লড়াইটা ছিল নিজের সঙ্গে।
সুপারিশপ্রাপ্ত ক্যাডার সাগর বলেন, যাত্রা এতো সহজ ছিল না। এই প্রাপ্তিতে কম ত্যাগ করতে হয়নি আমাকে। সার্জেন্টের চাকরিটা পেয়ে যতটা খুশি হয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম যেদিন সারদা গিয়ে জানতে পারলাম কোনভাবেই বিসিএসের ভাইভা দিতে দিবে না। ভাইভা দিতে হলে চাকরি ছেড়ে এসে দিতে হবে। পৃথিবীতে যারা চাকরি করতে চায়, চাকরি করে বাঁচতে চায় শুধু তারাই বুঝবে এটা কতবড় ঝুঁকি, কতবড় কষ্টের। এতো সংগ্রাম করে এসে একটা চাকরি পেয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া তাও এতো দ্রুত! তারপর যদি আমাদের মতো মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয় তাহলে তো আপনি নিজেকে শূলে চড়ানোর ঝুঁকি নিলেন।
ছাত্ররাজনীতি ছিলেন একটা সময় সক্রিয়। সে জীবন সম্পর্কে সাগর বলেন, জীবনে রাজনীতি করতে গিয়ে একবার শূন্য হাতে ফেরা। ৪১ বিসিএসের রিটেনে ফেইল করা। তারপরও রাতের পর রাত জেগে পড়াশুনা করে এতদূর এসে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে? চাকরিটা না থাকায় যে আফসোস, দুঃখ আমার হতো, একটা চাকরি পাওয়ার পর দেখলাম আমি একটা গলাকাটা মুরগী। সারাক্ষণ ছটফট ছফফট। কিভাবে কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। একদিকে স্বপ্ন আর অপর পাশে পরিবার, সমাজ, অনিশ্চয়তা। আমাকে শুধু একটা বেছে নিতে হবে।
পুলিশের প্রশিক্ষণ করেছেন প্রায় দীর্ঘদিন। এ যাত্রা কতটা কষ্টের তা প্রতিটা পুলিশ জানে। সাগর বলেন, সারদার মাঠে যে ট্রেনিং করেছে সে জানে ট্রেনিংয়ের কষ্ট কতটা। কিন্তু ট্রেনিংয়ের কষ্টের চেয়েও বেশি হতাশায় ছিলাম এই ভেবে, একটা চাকরির জন্য সারাজীবনের লালিত স্বপ্নটা নষ্ট করে দেব? সারদার মাঠে প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৬/১৭ কিলোমিটার প্যারেড করে, ৬ ঘণ্টা ক্লাস করে এসে যখন রাতে ঘুমাতে পারতাম না। পরেরদিন আবার একই রুটিন। এভাবে জীবন অতিবাহিত করতে করতে মনে হচ্ছিল কখন যেন পাগল না হয়ে যাই।
পুলিশের চাকরি অনেকের স্বপ্ন। এখানে অনেকের বেশি আগ্রহ থাকে অন্য চাকরির থেকে। এ চাকরি ছাড়ার কথা অনেকেও ভাবতে পারে না। এতে আছে সম্মান ও ক্ষমতা। এ চাকরি সহজে কে ছাড়ে। লোকে কি বলবে এই ভয়ে চাকরি ছাড়ার কথা লুকিয়ে রেখেছেন তিনি আড়াই মাস। নিজেকে রেখেছেন আত্মগোপনে। এ কথা কাউকে বলতে পারেননি।
পুলিশের লোভনীয় চাকরি আর ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে তিনি ট্র্যাকে ফিরেছেন। চারটি বিসিএসে প্রিলিতে পাস করা সাগরের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে নিজের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। এক চাকরির জন্য চারটি বিসিএস কীভাবে হাতছাড়া করা যায়!
সাগর বলেন, আমার মনে করি মানুষ বাঁচে তার স্বপ্নে। স্বপ্নের অপমৃত্যু হলে মানুষ বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলে। সার্জেন্টে থাকলে হয়তো বেঁচে থাকতাম, কিন্তু ভেতরে ভেতরে মৃত্যু হতো সেটা কেউ দেখত না। আর ব্যর্থতা হলো নিজের কাছে হেরে যাওয়া। আমার শুধু এতটুকু আত্মবিশ্বাস ছিল আমি পারব। আমি যতক্ষণ না নিজের কাছে হেরে যাব ততক্ষণ আমাকে কেউ হারাতে পারবে না। আল্লাহ এবার আমাকে নিরাশ করেননি। আমাকে ব্যর্থ হতে হয়নি।
বিয়ের জন্য যে দেশের পাত্র চান সায়ন্তিকা, ফাঁস হলো অভিনেত্রীর গোপন ইচ্ছে
সার্জেন্টের চাকরি ছাড়লেও পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সাগর। তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল পুলিশ ক্যাডার হওয়ার। পুলিশের পোশাকের প্রতি একটা টান সবসময় কাজ করে। এখনো যেহেতু সুযোগ আছে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সূত্র ও ছবি : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।