লাইফস্টাইল ডেস্ক : হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ। এটি মুসলিম বিশ্বের বৃহদায়তনের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি। উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে তা সম্পন্ন হয়। খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে এই মসজিদের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে।
হাদিসের বর্ণনা অনুসারে এই মসজিদে কিয়ামতের আগে ঈসা (আ.) আগমন করবেন এবং পৃথিবী থেকে জুলুমের অবসান ঘটাবেন। এ ছাড়া এই মসজিদের সঙ্গে কারবালার ময়দানে শহীদ হুসাইন বিন আলী (রা.) এবং কারবালার ময়দানে বন্দি যোদ্ধাদের নানা স্মৃতি সংরক্ষিত আছে। মসজিদের পাশেই একটি বাগানে শায়িত আছেন ক্রুসেড বিজয়ী মুসলিম শাসক সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.)। তিনি খ্রিস্টানদের কাছ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস উদ্ধার করেন।
ধর্মীয় তীর্থ হিসেবে এই স্থানের ইতিহাস আরো প্রাচীন। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে, লৌহ যুগে অ্যারামিয়ানরা এখানে দেবতা হাদাদের মন্দির নির্মাণ করে। ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমান শাসকরা সেই মন্দির ভেঙে নির্মাণ করেন দেবতা জুপিটারের মন্দির। খ্রিস্টান বাইজেন্টাইনরা দামেস্ক জয় করার পর জুপিটারের মন্দির ভেঙে নির্মাণ করেন জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের গির্জা ও ক্যাথেড্রাল।
কোনো ঐতিহাসিকের মতে, জন হলেন কোরআনে বর্ণিত নবী ইয়াহইয়া (আ.)।
৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ দামেস্ক জয় করার পর ক্যাথেড্রালের ছোট একটি অংশে মুসলমানদের নামাজ পড়ার স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর খলিফা আল ওয়ালিদ ক্যাথেড্রালের বেশির ভাগ অংশ নিয়ে একটি বৃহৎ আয়তনের মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। বিনিময়ে তিনি শহরের অন্য গির্জাগুলো খ্রিস্টানদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ক্যাথেড্রালের পূর্ব অংশে খ্রিস্টানদের প্রার্থনার সুযোগ রাখা হয়।
প্রায় ৯ বছর কাজ করার পর ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিকের যুগে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ঐতিহাসিক ইবনুল ফকিহের বর্ণনা অনুসারে, উমাইয়া মসজিদের নির্মাণকাজে ৬ থেকে ১০ লাখ স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় করা হয়। এতে পারস্য, ভারত, গ্রিক ও মরক্কোর প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক কাজ করে। খলিফা ওয়ালিদ মোজাইকের কাজের জন্য ২০০ সুদক্ষ বাইজেন্টাইন শ্রমিক নিযুক্ত করেন। মসজিদের মার্বেল পাথর এবং ৪৩ হাজার বর্গফুটের সোনালি মোজাইক বিস্ময়কর সৌন্দর্যের জন্ম দিয়েছিল।
পরবর্তী যুগের সব মুসলিম শাসকই উমাইয়া মসজিদের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যেমন—আব্বাসীয় আমলে ‘কুব্বাতুল খাজানা’ (ধনভাণ্ডারের গম্বুজ) এবং ‘মিনারেত অব দ্য ব্রাইড’ নির্মাণ করেন। সেলজুক আমলে মসজিদে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে রাজা তুতুশ এটির পুনর্নির্মাণ করেন।
মামলুক সুলতান কাইতবাই নিজের নামানুসারে উমাইয়া মসজিদে কাতিবাই মিনার স্থাপন করেন। এ ছাড়া মামলুক সুলতানরা মসজিদের বিভিন্ন অংশ মার্বেল পাথর দ্বারা সুশোভিত করেন। উসমানীয় সুলতান প্রথম সেলিম উমাইয়া মসজিদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ওয়াকফ করেন। সেই ওয়াকফ সম্পদ পরিচালনার জন্য ৫৯৬ জন কর্মী নিযুক্ত করা হয়। সিরিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক হাফেজ আল-আসাদ দীর্ঘ সংস্কারকাজের মাধ্যমে উমাইয়া মসজিদের উমাইয়াশৈলী ফিরিয়ে আনেন।
উমাইয়া মসজিদের আয়তন দৈর্ঘে ৩১৮ ফুট এবং প্রস্থে ৫১২ ফুট। মসজিদ কমপ্লেক্সের উত্তরাংশজুড়ে আছে বিশাল আঙিনা এবং দক্ষিণাংশকে বলা হয় হারাম বা পবিত্র সীমানা। পুরো মসজিদ কমপ্লেক্স পাথরের সীমানাপ্রাচীর দ্বারা সংরক্ষিত। সীমানাপ্রাচীরে একাধিক তোরণ আছে। দেয়ালের প্রতিটি দুই কলামের মধ্যে আছে একটি জোড় স্তম্ভ।
মসজিদের প্রধান নামাজ কক্ষে আছে তিনটি তোরণ। মূল প্রার্থনা কক্ষের ওপর মসজিদের সর্ববৃহৎ গম্বুজ ‘কুব্বাতু নিসর’ (ঈগল গম্বুজ) স্থাপিত। আগে এটি কাঠের তৈরি ছিল। ১৮৯৩ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে তা ধ্বংস হয়ে গেলে পাথরের গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে মোট তিনটি মিনার রয়েছে। তা ভিন্ন ভিন্ন তিন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সব প্রতিযোগিতায় সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ
নিম্নে মিনারগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হলো—
১. মানারাতে আরুস : যাকে ইংরেজিতে মিনারেত অব দ্য ব্রাই বলা হয়। এটিই মসজিদের প্রথম মিনার এবং তা উত্তর দিকের দেয়ালে অবস্থিত।
২. মিনারাতে ঈসা : এই মিনারটি মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উচ্চতা ২৫৩ ফুট। মিনারটি আব্বাসীয় আমলে নির্মিত। তবে বর্তমান কাঠামোটি ১২৪৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়।
৩. মিনারাতে গারবিয়্যা : এটি পশ্চিম মিনার বা কাতিবাই মিনার নামেও পরিচিত। মামলুক সুলতান কাইতবাই ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে মিনারটি নির্মাণ করেন।
সূত্র : আর্কনেট ডটঅর্গ, স্টাডি ডটকম ও উইকিপিডিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।