আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় ৬৬টি গণকবরের উদঘাটন

seria

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার স্বৈরশ্বাসক বাশার আল-আসাদ। ওই দিন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

seria

বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর দেশটিতে গণকবরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। হেগের ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পারসনস জানিয়েছে, সিরিয়ায় প্রায় ৬৬টি গণকবর থাকতে পারে। তবে সত্য উদঘাটনে আরও সময় লাগবে। যদিও সংগঠনটির প্রধান ক্যাথরিন বোমবার্গার বলছেন, পরিবারগুলো এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হারানো স্বজনদের খোঁজ করতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার দামেস্কের কাছে কুতাইফাহ ও নাজহা শহরে দুটি গণকবর পরিদর্শন করেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ প্রসিকিউটর স্টিফেন র‍্যাপ। তার মতে, সিরিয়ায় গণকবর প্রমাণ করে সাবেক নেতা বাশার আল-আসাদের শাসনামলে থাকা রাষ্ট্রীয় ‘মৃত্যুর যন্ত্র’ উন্মোচিত হচ্ছে।

তিনি বলেছেন, ২০১৩ সাল থেকে এ যন্ত্রের মাধ্যমে এক লাখের বেশি মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। নাৎসিদের পর এমন ভয়াবহ রূপ আমরা আর দেখিনি।

রুয়ান্ডা ও সিয়েরা লিওনের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করা র‍্যাপ সিরিয়ার নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণ এবং সম্ভাব্য বিচার কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

র‍্যাপের মতে, গোপন পুলিশ, যারা মানুষদের তাদের বাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে তুলে নিয়ে যেত, কারারক্ষী ও জিজ্ঞাসাবাদকারীরা যারা তাদের অনাহারে ও নির্যাতনে মেরে ফেলত, ট্রাক চালক ও বুলডোজার চালক যারা মৃতদেহগুলো লুকিয়ে ফেলত— এই হত্যাযন্ত্রে হাজারো লোক কাজ করত। আমরা এখানে একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কথা বলছি, যা পরিণত হয়েছে মৃত্যুর যন্ত্রে।

২০১১ সালে আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হওয়া সংঘাতে কয়েক লাখ সিরীয় নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

আসাদ ও তার বাবা হাফেজ আল-আসাদের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরেই মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন দেশের অভিযোগ, তারা ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, কারাগারে ব্যাপক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিরীয় সংগঠন সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্সের প্রধান মৌআজ মুস্তাফা জানিয়েছেন, কুতাইফাহ শহরের গণকবরে অন্তত এক লাখ মরদেহ সমাহিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাজহার এক কৃষক জানিয়েছেন, সেনা পাহারায় রেফ্রিজারেশন ট্রাকে করে লাশগুলো আনা হত এবং বুলডোজারের সাহায্যে দীর্ঘ পরিখায় ফেলা হত।

উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই গণকবরগুলোর খনন কাজ চলেছে। কুতাইফাহ শহরে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে দুই বার ট্রাকে করে ৩০০ থেকে ৬০০ লাশ নিয়ে আসা হতো বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এক গণকবর খননকারী।

সিরিয়ার এই গণহত্যার প্রথম বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় জার্মান আদালতের শুনানি এবং মার্কিন কংগ্রেসের সাক্ষ্যে।

র‍্যাঙ্কিংয়ে সুখবর পেলেন তিন টাইগার বোলার

মৌআজ মুস্তাফা জানিয়েছেন, প্রতিবার লাশবাহী ট্রাকগুলো দামেস্কের সামরিক হাসপাতালগুলো থেকে আসত এবং লাশগুলো গর্তে ফেলে সঙ্গে সঙ্গে মাটি চাপা দেওয়া হত। ২০১৮ সালে সিরিয়া থেকে পালিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নেওয়া এই সাক্ষী বারবার গণহত্যার সাক্ষ্য দিয়েছেন, তবে তার পরিচয় সংবাদমাধ্যমের কাছে গোপন রাখা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স