জুমবাংলা ডেস্ক : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থানান্তর করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বারবার তাগাদা দিলেও, তা আমলে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বারবার সময় নিয়েও সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইউজিসি। এর কয়েকটির নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করছে না।
আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখনই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে, তা মঞ্জুর করেছে ইউজিসি। এখন ইউজিসি বলছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে কমিটি গঠন ও পরিদর্শন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউজিসির ছাড় দেওয়ার মানসিকতার কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না।
জানা গেছে, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪টি। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৫৪টি। যার মধ্যে অন্তত ৪৭টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেছে। আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে পুরো শিক্ষা কার্যক্রম না চালিয়ে ‘লিয়াজোঁ অফিসের’ নামে ঢাকায় ভাড়া বাড়িতেও শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১৯৯৬ সালে অনুমোদিত পিপলস ইউনিভার্সিটি, ২০০২ সালে স্থাপিত স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা), ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি এবং ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আশা ইউনিভার্সিটি।
২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করতে দেশের ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আলটিমেটাম দিয়েছিল ইউজিসি। তা না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেশিরভাগই স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেলেও এই সাতটি এখনও যেতে পারেনি। এমনকি স্থায়ী ক্যাম্পাসে সব কার্যক্রম স্থানান্তর ও ক্যাম্পাস নির্মাণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত বছর চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বন্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইউজিসি। পরবর্তী সময়ে সে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে রাজধানীর আসাদ অ্যাভিনিউয়ে ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ইউজিসিকে নরসিংদীতে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের কথা জানিয়েছে। তবে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি পড়েছে সরকারি রাস্তার জায়গার মধ্যে। জানতে চাইলে পিপলস ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সরকারি রাস্তা যেখানে হচ্ছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ভাগের এক ভাগ স্থাপনা পড়ে গেছে। সেগুলো দ্রুতই ভাঙা শুরু হবে। ফলে সরকার ক্ষতিপূরণ দিলে এরপর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ ফের শুরু করা যাবে।
ধানমন্ডির ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ইউডা) স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য গাজীপুরে ৩ দশমিক ৮২ একর জমি কিনেছে। তবে তাদের জমিটি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কাছে হওয়ায় বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র মেলেনি। সেখানে একটি আধা পাকা টিনশেড ভবন রয়েছে। ইউডার রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফফাত কায়েস চৌধুরী বলেন, গাজীপুর ও বছিলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা রয়েছে। কিন্তু কোথায় স্থায়ী ক্যাম্পাস করা হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। যে কোনো এক জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ইউজিসির কাছে তারা আরও ছয় মাস সময় চাইবেন।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ অনুমোদন পেয়েছিল ২০০২ সালে। বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে। ডেমরার গ্রিন মডেল টাউনে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল মতিন বলেন, একটি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আরেকটির কাজ চলমান। আশা করছি, দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যেতে পারব।
মতিঝিলে মোমেন খান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের নামে শূন্য দশমিক ৭৫ একর জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি। তাদের অন্য কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। ইউজিসি বলেছে, এ জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে লিখে দিতে হবে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অবিনয় চন্দ্র সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও চায় মতিঝিলে স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে। তাই ফাউন্ডেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি লিখে দিতে সিন্ডিকেট থেকে ট্রাস্টি বোর্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজধানীর গুলশানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্লট রয়েছে। সেখানে কয়েকটি ভবনও নির্মাণ হয়ে গেছে। তার পরও কিছু সময় লাগছে। তবে দ্রুতই স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যাব।
ঢাকার বনানীতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হচ্ছে পূর্বাচলে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। কয়েকটি ভবনও হয়ে গেছে। আশা করছি দু-তিন মাসের মধ্যে চলে যেতে পারব।
আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাময়িক অনুমোদন পায়। রাজধানীর শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে তুরাগ থানাধীন উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প এলাকায় আশা ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে ইউজিসি বলছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তাদের যথেষ্ট সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে আশা ইউনিভার্সিটি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে যাদের সময় দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ চলে গিয়েছে। এটি আশার দিক। এর বাইরে যারা এখনো যেতে পারেনি, তাদেরও অগ্রগতি রয়েছে।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, যেগুলো এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি করা হবে। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় বেঁধে দিয়েছিল ইউজিসি। এর ব্যত্যয় ঘটলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। যদিও ওই সময়ের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই পূর্ণাঙ্গভাবে স্থানান্তরে ব্যর্থ হয়। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা কমিশনকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।