বিনোদন ডেস্ক : বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ খান এবং আমির খানের যে খুব একটা দোস্তি নেই, সে কথা প্রায় সবারই জানা। কিন্তু শাহরুখের জন্য যে আমিরের সঙ্গেও কাজলের ঠান্ডা লড়াই চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে, তা কি জানতেন? সেই তিক্ততা এমন পর্যায় পৌঁছেছিল যে, দীর্ঘদিন কথা বলেননি আমির-কাজল। একসঙ্গে ছবিতে অভিনয়! তাও হয়েছিল অনেক পরে।
কিন্তু কী ঘটেছিল? ১৯৯২ সালে শাহরুখ খান যখন বলিউডে অভিষেক করেন, তার আগে থেকেই ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন আমির খান। সে সময় জুহি চাওলার সঙ্গে তার বেশ কিছু সিনেমা সুপারহিট হয়। জুহি আর আমিরের বন্ধুত্বও বেশ জমে উঠেছে।
ঠিক এমন সময়ে জুহির সঙ্গে শাহরুখের একটি ছবির অফার আসে। নাম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’। সেই ছবি চলাকালীন জুহির সঙ্গে শাহরুখ খানেরও বেশ ভালোই সখ্যতা গড়ে ওঠে। জুহির সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রেই শাহরুখের আলাপ হয় আমির খানের সঙ্গে। জুহিই আলাপ করিয়ে দেন। শাহরুখ এবং আমিরের মধ্যেও ভালোই আলাপ জমে ওঠে।
শাহরুখ তখন নতুন। ভবিষ্যতে তিনি কী কাজ করবেন, কী করবেন না- সে বিষয়েও আমিরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন কিং খান। ঠিক এমন সময়ে শাহরুখের কাছে ‘বাজিগর’ ছবির অফার আসে। শাহরুখের চরিত্রটি নেগেটিভ। কিন্তু তা-ও চরিত্রটি করতে রাজি হয়ে যান কিং খান। শাহরুখ শোনেন বিপরীতে একটি নতুন মেয়ে কাজ করবে। নাম কাজল।
কাজল কেমন তা জানতে আমিরকেই জিজ্ঞাসা করেন শাহরুখ। কাজলকে চিনতেন আমির। ‘তারকার (তনুজা) মেয়ে, তাই অ্যাটিটিউড প্রবলেম থাকতে পারে’, কাজল সম্পর্কে শাহরুখকে এমনটাই বলেছিলেন আমির।
শুরু হয় ‘বাজিগর’-এর শুটিং। কাজলকে নিয়ে প্রথমে চিন্তায় থাকলেও দেখতে দেখতে শাহরুখ-কাজলের অফস্ক্রিন রসায়নও বেশ জমে ওঠে। সুপারহিট হয় ‘বাজিগর’ ছবিটি। দেখতে দেখতে কাজল এবং শাহরুখ হয়ে ওঠেন ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’। একের পর এক ছবি করছেন। প্রত্যেকটাই সুপারহিট।
এমন সময়ে শাহরুখ তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে বলা আমিরের ওই কথাগুলো ফাঁস করে দেন কাজলের কাছে। আমিরের কথায় তার যে কাজল সম্পর্কে প্রথমে বেশ নেতিবাচক ধারণা হয়েছিল, সে কথাও প্রিয় বন্ধুকে বলেন কিং খান। বাংলা কথ্য ভাষায় যাকে ‘ক্লিকবাজি’ বলা চলে। যা না করলেও পারতেন শাহরুখ। কারণ এতে যে কারোই মন খারাপ হওয়ার কথা।
এদিকে কাজল তো রেগে লাল। আমিরের সঙ্গে তখনও পর্যন্ত একটাও ছবি করেননি তিনি। তা সত্ত্বেও কেন আমির তাকে বাইরে থেকে দেখে এমন ‘আলটপকা’ মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে জবাব চান কাজল। ইন্ডাস্ট্রির অলিখিত প্রোটোকল অনুযায়ী, একজন অভিনেতা কখনোই আর একজন অভিনেতা সম্পর্কে জনসমক্ষে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারেন না। আমির প্রোটোকল ভেঙেছেন, সে অভিযোগও আনেন কাজল।
এদিকে একদা বন্ধু শাহরুখও সব কথা কাজলকে ফাঁস করে দেওয়ায় শাহরুখের উপরেও রেগে যান আমির। সব মিলিয়ে শাহরুখ এবং আমিরের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। কাজল এবং আমিরের সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়, শত্রুতে পরিণত হন তারা। কাজল দীর্ঘদিন ছবি করতে চাননি আমিরের সঙ্গে। কথাও খুব একটা হতো না তাদের।
এরপর ১৯৯৭ সালে কাজলের কাছে ‘ইশক’ ছবির অফার আসে। কাজল ছাড়াও সেই ছবিতে ছিলেন জুহি চাওলা, আমির খান এবং অজয় দেবগণ। শোনা যায়, এই ছবিতে প্রথমে কাজলকে নেওয়ার কথা ভাবেননি পরিচালক। পছন্দ ছিলেন মনীষা কৈরালা। কিন্তু মনীষার ডেট ম্যাচ না করায় এবং সে সময় অজয়ের অনুরোধে শেষমেশ কাজলকে নেওয়া হয়। সে সময় অজয়ের সঙ্গে কাজলের প্রেম নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ গুঞ্জন।
যাহোক, একসঙ্গে সিনেমা করলেও আমির নয়, অজয়ের বিপরীতেই অভিনয় করেছিলেন কাজল। এমনকি সেটেও তাদের খুব একটা যে কথা হতো, এমনটাও নয়। এরপর আর আমিরের সঙ্গে আরও দীর্ঘ সময় ছবি করেননি কাজল। অজয়ের সঙ্গে বিয়ে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কাজল।
সাল ২০০৬। কাজল ভাবেন অনেক হয়েছে, এবার কামব্যাক করতে হবে তাকে। যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে তার কাছে অফার যায় ফিল্ম ‘ফানা’র। বিপরীতে আমির খান। আগে হলে হয়তো কাজল না করতেন। কিন্তু সেই সময় তার ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে ওই ছবি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা-ই থাকুক না কেন, আমির যে শক্তিশালী অভিনেতা, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন কাজলও। তিনি রাজি হয়ে যান। সেই ছবি বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। কেন যে এর আগে আমির-কাজল জুটি বাঁধেননি, প্রশ্ন তোলেন ভক্তরা। এর পেছনে যে দায়ী ছিলেন শাহরুখই, তা কি আর তারা জানতেন?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।