জুমবাংলা ডেস্ক : প্রবেশ করার আগেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন একটি তোরণ। ভেতরের স্থাপনা আরও সাজানো, গোছানো। ৬০টি ষাঁড়ের জন্য পৃথক পৃথক বুলশেড, অফিস-কাম-ল্যাব ভবন, সিমেন কালেকশন শেড, গবাদিপশুর খাদ্য গুদাম, আইসোলেশন শেড ও এক্সারসাইজ ইয়ার্ড। আছে গার্ডরুম, গ্যারেজ, বাউন্ডারি ওয়ালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা। বৈদ্যুতিক লাইনও বেশ পরিপাটি। ড্রেনগুলোও পরিকল্পিত, পানি সরবরাহের লাইনও সুগঠিত।
অথচ যে প্রাণীর জন্য এই সুন্দর আয়োজন সেই প্রাণীর অস্তিত্বই নেই। বলছি খুলনা ‘বুল কাফ রিয়ারিং ইউনিট কাম মিনিল্যাব’ এর কথা। যেখান থেকে ষাঁড়ের সিমেন সংগ্রহের পর বীজ তৈরি করে দেওয়া হবে গাভিকে। তবে ষাঁড় না থাকলে কি হবে; আছে নয়জন ষাঁড় রক্ষক। সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাও। বেতনভাতাসহ মাসে খরচ তিন লাখের ওপর। কবে নাগাদ আসবে ষাঁড় সেটিও নিশ্চিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে অপচয় হয় রাষ্ট্রের টাকা আর উপকারভোগীরা বঞ্চিত হয় সঠিক সুফল থেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুধ ও মাংসের ঘাটতি পূরণে ২৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ একর জায়গার ওপর ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বুল কাফ রিয়ারিং ইউনিট কাম মিনিল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে উন্নতমানের ষাঁড় ও সিমেন তৈরিতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। স্থান নির্ধারিত হয় বাইপাস সড়কের চক হাসানখালী মৌজায় নতুন জেলখানার একটু পশ্চিমে। ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিলম্বিত হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে হস্তান্তরও হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে। ছয় মাস আগে লোকবলও নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু আসেনি ষাঁড়। ফলে দীর্ঘ দিন পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে স্থাপনার নানা অংশ। এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে ঝোপঝাড় আর বনজঙ্গল। এমনকি ষাঁড়ের খাদ্য হিসেবে উৎপাদিত নেপিয়ার ও কালার নেপিয়ার ঘাস বড় হয়ে পেকে গেছে। উচ্চমূলের এই ঘাস কেটে ফেলে দিয়ে পুনরায় আবাদ করতে হবে। আর প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। আরও জানা যায়, আর্টিফিসিয়াল ইনসিমেশন অ্যান্ড ইমব্রায়ো ট্রান্সফার (এআইইটি) বা কৃত্রিম প্রজনন ও ভ্রুণ স্থানান্তরিত এই প্রকল্পে সপ্তাহে একটি ষাঁড় থেকে যে পরিমাণ সিমেন পাওয়া যাবে তা থেকে এক হাজারের অধিক গাভিকে বীজ দেওয়া সম্ভব হবে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ৪০ হাজার। যে বীজ সংরক্ষণ করা যাবে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আড়াই বছর বয়সের ষাঁড় থেকে পরবর্তী ছয় বছর পর্যন্ত একনাগাড়ে সিমেন নেওয়া যাবে। যেটা সাভারে যেয়ে বীজে পরিণত করে ফ্রোজেন করে ক্যানের মধ্যে রেখে সারাদেশে সরবরাহ করা যাবে। এতে জন্ম নেবে উৎকৃষ্টমানের বাছুর। অর্থাৎ গাভির বীজের জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশের মাংস ও দুধের চাহিদা দুই-ই পূরণ হবে, এমনই লক্ষ্য এই কার্যক্রমের। ষাঁড় রক্ষকরা জানান, ষাঁড় না থাকায় বর্তমানে তারা বনজঙ্গল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। পূর্বের লাগানো ঘাস পরিষ্কার করে তারা আবার ঘাস রোপণ করবে। এছাড়া নতুনভাবে নেপিয়ারসহ উন্নতমানের ঘাস রোপণ করে ষাঁড়ের খাবারের জন্য প্রস্তত করছেন তারা। এর বাইরে গোটা এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করতে হয় তাদের। বুল কাফ রিয়ারিং ইউনিট কাম মিনিল্যাবের সায়েন্টিফিক অফিসার সুমন সরকার জানান, ইতোমধ্যে আমাদের বাইরের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ল্যাবের যন্ত্রপাতি এখনো আসেনি, এমনকি ল্যাব টেকনিশিয়ান পদের লোকবলও পদায়ন হয়নি। তবে স্যারেরা চাহিদাপত্র নিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ষাঁড় পাঠাবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে।
সনাক খুলনার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কত দিনের মধ্যে বীজ তৈরি করে খামারি বা কৃষককে দিয়ে গরু উৎপাদন করা যাবে তার সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে এমনই হয়। এমনকি এই খাতে কিভাবে অর্থের অপচয় হয়েছে সেই দুর্নীতিরও তদন্ত চান তিনি। শুধু তাই নয়, এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে কারো বিশেষ স্বার্থ ছিল কিনা সেটির খোঁজ নেওয়া উচিত। তবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত এই কার্যক্রম চালু করার তাগিদ এই নাগরিক নেতার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।