স্পোর্টস ডেস্ক : দুই বছর আগেও এটা একটা রহস্য হয়ে ছিল বাংলাদেশের কাছে। নিউজিল্যান্ডকে নিজেদের মাঠে একাধিকবার তারা হারিয়েছে। নিরপেক্ষ ভেন্যুতেও হারিয়েছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের মাঠে কিউইদের কেন যেন হারাতে পারত না বাংলাদেশ। তাসমানপারে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারত না। সেই বাংলাদেশ গত দুই বছরে কিউইদের মাঠে সাফল্যের সেই রেসিপি খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম নিউজিল্যান্ড সফর এবং এরপর গত দুই দশকে যতবারই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ডে গেছে বাংলাদেশ, ততবারই ফিরে এসেছে শূন্য হাতে। ছবির মতো সুন্দর দেশ থেকে পেয়েছে শুধুই হতাশা। অথচ এই সময়ে বাংলাদেশ দলে খেলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের মতো বড় বড় তারকা। গত দুই বছরে বাংলাদেশ যে দুটি সফর করেছে নিউজিল্যান্ডে, কোনোটিতেই বড় তারকাদের বেশির ভাগই ছিলেন না। এ দুই বছরেই কি না শান্ত-লিটনরা এমন কীর্তি গড়েছেন, যেটি আগের ২০ বছরে ছিল না।
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ ক্রিকেটের তরুণোদয় গত বছরের জানুয়ারিতে, মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয় দিয়ে। ২০ বছর আর ৩২ ম্যাচের অপেক্ষা শেষে বাংলাদেশ পায় নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথম জয়। মুমিনুল হকের নেতৃত্বে তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশের সেই সাফল্য নতুন দিনের পথই যেন দেখিয়েছিল। এ বছর সাদা বলের দুটি সিরিজ বাংলাদেশ এমন প্রেক্ষাপটে খেলতে গিয়েছে, যখন দেশের ক্রিকেটে যে প্রশ্নটা বেশি উচ্চারিত, নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সামনে এগোবে নাকি এ সফর শেষে আবার অভিজ্ঞ সাকিবকেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে বিসিবি। কদিন আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথম ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি জয়ে শান্ত যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে তিন-তিনটি ‘প্রথমে’র জন্ম তাঁরই অধিনায়কত্বে।
নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে ওয়ানডে জেতার পর গতকাল বাংলাদেশ একই মাঠে নেমেছিল যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী আর চনমনে মেজাজে। ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশের বোলাররা এমন ধাক্কা দিলেন কিউই ব্যাটারদের, আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতেই পারেনি স্বাগতিকেরা। টি-টোয়েন্টিতে এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য বাংলাদেশ কখনো নিউজিল্যান্ডে উপহার দিতে পারেনি। ইনিংসের প্রথম ৯ বলে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৩–১! একবার ভাবুন, ৩ কিন্তু ‘রান’ নয়, উইকেটসংখ্যা! বোলাররা এমন স্বপ্নের শুরু এনে দিলে সেই ম্যাচ না জেতাই বরং অবাক করার বিষয় হতো। বাংলাদেশ এভাবে আর অবাক করেনি, বরং ম্যাচটা জিতেই মাঠ ছেড়েছে। শান্তর মুখে ম্যাচ শেষে তাই গর্বের হাসি, ‘অনেক খুশি, অনেক বেশি গর্বিত এই জয়ে। রোমাঞ্চকর অনুভূতি।’
দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে শেখ মেহেদী হাসানের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। তিনিই পথটা দেখিয়েছিলেন সতীর্থ বোলারদের। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শান্ত বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে বললেন, ‘এটি (বোলিং পারফরম্যান্স) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়েছে, তারা (বোলাররা) দ্রুত শিখেছে। নতুন বলে শরীফুল, (তানজিম হাসান) সাকিব খুব ভালো বোলিং করেছে। শেখ মেহেদীর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ। এই কন্ডিশনে সে খুব ভালো বোলিং করেছে।’
নেপিয়ার থেকে বাংলাদেশের গন্তব্য সিরিজের বাকি দুই টি-টোয়েন্টির ভেন্যু মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। এমনিতে এবার টানা দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ অনেক আত্মবিশ্বাসী, পরের ভেন্যুর নাম শুনে তো তাদের আরও উজ্জীবিত হওয়ার কথা। শান্ত বললেন, ‘অবশ্যই (নেপিয়ারের আত্মবিশ্বাস মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে কাজে দেবে)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি-টোয়েন্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেরা এখন খুবই আত্মবিশ্বাসী। তবে আমাদের এখন পরের ম্যাচের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে এবং আশা করব, সবাই নিজেদের কাজটা করবে।’ দুই বছরের মধ্যে নিউজিল্যান্ডে তিন সংস্করণে জয়ের চক্র পূরণ করেছে বাংলাদেশ। এবার বাকি থাকল শুধু সিরিজ জয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।