বিনোদন ডেস্ক : ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী বিয়ে করেন নিশি ইসলাম (৩০) নামে এক নারীকে। এ খবর জানাজানি হলে ওই বছরের ৪ মার্চ শাওন, তার বোন শিঞ্জন, সেঁজুতি, শিঞ্জনের স্বামী সাব্বির ও পুলিশের এডিসি নাজমুল ইসলাম ভুক্তভোগী নিশির বাড়িতে যান। সাদা কাগজে সই করতে চাপ দেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে সৎ মা নিশিকে ভারী বস্তু দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন শাওন।
সম্প্রতি এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নিশি ইসলামের দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহার সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এজাহারে বলা হয়, বাবার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি না হওয়ায় সৎ মাকে শায়েস্তা করতে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশের এডিসি নাজমুল ইসলামসহ পুলিশকে ব্যবহার করেন শাওন। বাড্ডা থানায় প্রতারণা ও চাঁদা দাবির হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় শাওনের সৎ মা নিশি ইসলামকে। এরপর এ মামলায় তাকে ৬১ দিন জেল খাটানো হয়। এছাড়া তাকে মাদক ব্যবসায়ী সাজানোর ব্যর্থ চেষ্টাও করে পুলিশ।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৩ মার্চ ভুক্তভোগী নিশি ইসলাম হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে শাওনসহ ১২ জনকে আসামি করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ২২ এপ্রিল উভয়পক্ষকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য সমন জারি করেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন- মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ও মামলার বাদী নিশি ইসলামের স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী, মেহের আফরোজ শাওন, তার বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জন ও সেঁজুতি, শিঞ্জনের স্বামী সাব্বির, এডিসি নাজমুল, সুব্রত দাস, মাইনুল হোসেন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপ-পরিদর্শক শাহ আলম ও মো. আলীর ভাগনে মোখলেছুর রহমান মিল্টন।
এর মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও উপ-পরিদর্শক শাহ আলম গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন এবং বাকি দশ আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহ আসামিদের বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শরিয়ত মোতাবেক ৫০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ও ৫০ হাজার টাকা উসুল করে আসামি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী তার আগের স্ত্রীর কথা গোপন রেখে বাদী নিশিকে বিয়ে করেন। তিনি পরবর্তীসময়ে জানতে পারেন মো. আলী আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এবং তার একটি পুত্র ও তিনটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার প্রথম বিয়ে সম্পর্কে জানাতে বিভিন্ন রকমের ছলনা ও প্রতারণার আশ্রয় নেন। পরবর্তীসময়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি শাওনের বোন শিঞ্জন ও তার স্বামী সাব্বির বাদীর বাড়িতে এসে বিয়ের সম্পর্ক গোপন রেখে দ্রুত স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করার জন্য হুমকি দেন। এরপর ৪ মার্চ আসামি মো. আলী নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে তার স্ত্রী ও মামলার বাদীকে গুলশানের বাসায় যাওয়ার জন্য বলেন। তখন তার আগের স্ত্রীকে দেখে আসামির প্রতারণা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পান।
এজাহারে বলা হয়, এসময় অন্য আসামিরা তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন। পরদিন আবারও শাওন ও এডিসি নাজমুলসহ অন্য আসামিরা বাদীর বাড়িতে ঢুকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে শাওন তাকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলে আসামিরা পালিয়ে যান।
এরপর ওই বছরের ২৪ এপ্রিল বাদীকে ডিবির অফিসে ডেকে নেন ডিবি পরিদর্শক শাহজালাল। সেখানেও শাওনসহ অন্য আসামিরা নিশিকে মারধর করেন। এসময় সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন বাড্ডা থানার ওসিকে বাদীর বিরুদ্ধে মামলা নিতে বলেন। পরে নিশির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চাঁদা দাবির মামলা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে পুলিশ। ৬১ দিন কারাভোগের পর এ মামলায় জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন তিনি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও শাওনের সৎ মা নিশি ইসলাম বলেন, ‘আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় আমি সন্তুষ্ট। আমি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তারা বিষয়টি মিটমাট করার কথা বলেও এতদিন মিটমাট না করে উল্টো আমাকে হুমকি দিচ্ছে।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ‘মামলার বাদী নিশি ইসলামকে তার স্বামী মোহাম্মাদ আলী আগের বিবাহের কথা গোপন রেখে বিয়ে করে প্রতারণা করেছেন। অন্যদিকে আসামি মেহের আফরোজ শাওন, তার বোন শিঞ্জন, সেঁজুতি ও শিঞ্জনের স্বামী সাব্বির বিয়ের কথা গোপন রেখে নিশির স্বামীকে তালাক দিতে চাপ দেন। এতে নিশি রাজি না হলে শাওন তাকে বেধড়ক পেটান।’
তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে শাওন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুক্তভোগী নিশিকে পুলিশ দিয়ে প্রতারণা ও চাঁদা দাবির মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ভুক্তভোগীকেও মাদক ব্যবসায়ী সাজানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। আমরা এ ঘটনায় জড়িত সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোসলেহ উদ্দিন জসিম বলেন, ‘আমার দুই আসামি পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও উপ-পরিদর্শক শাহ আলম ভুক্তভোগী নিশির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় মামলা দিয়ে হয়রানি করেননি। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তৎকালীন ডিবিপ্রধান হারুন ও এডিসি নাজমুল চাপ দিয়ে ভুক্তভোগী নিশির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।’
মামলার অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে তার প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে মামলার বিষয়ে অভিযুক্ত মেহের আফরোজ শাওনের মন্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।