জুমবাংলা ডেস্ক : শাপলা যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তখন তার মা কুলছুম বেগম কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকেই শাপলার মনে চিকিৎসক হওয়ার অদম্য ইচ্ছা জাগে। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এর পর এ বছর মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন শিশুকালে মা হারানো সেই শাপলা। নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও আর্থিক সংকটের কারণে তার ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের নিকড়হাটা গ্রামের অটোরিকশা চালক শফিকুল ইসলামের মেধাবী এই মেয়েটির চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। শাপলাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সহায় সম্পত্তি বলতে দুটো ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। বাবা পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। পরিবারের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে তার একার আয়েই চলে সংসার।
তার পরিবার জানায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর স্বল্প আয় দিয়ে যেখানে ঠিকঠাকমতো সংসারই চলে না সেখানে মেয়েকে মেডিকেল কলেজে কীভাবেই বা ভর্তি করবেন আর কীভাবেই তার পড়ালেখার খরচ চালাবেন, সে চিন্তায় বাবা শফিকুলেরও চিন্তার শেষ নেই। মেয়ের মতো তিনিও সমাজের বিত্তবানদের দিকে তাকিয়ে আছেন, যদি কেউ তার মেয়েটির চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে মেধাতালিকায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিলাভ, একই স্কুল থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ফল অর্জনের পর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন শাপলা। এই ধারাবাহিকতায় এবারের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ৭৪ নাম্বার পেয়ে মেধাতালিকায় ৪৮৫১ তম স্থান অর্জন করেন। নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
অশ্রুসজল চোখে শাপলা বলেন, মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি ডাক্তার হবো, এ জন্য পড়াশোনা আর নামাজ ছাড়া অন্য কিছুতেই আমার মনোযোগ ছিল না। টাকা দিয়ে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ না থাকায় প্রতিদিন প্রায় ১৪ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করতাম। আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছেন, কিন্তু জানি না- এখন অর্থের কাছে আমাকে পরাজিত হতে হয় কি না।
বাবা শফিকুল মেয়ের এমন সাফল্যে টাকা জোগাড়ের জন্য অটোরিকশা নিয়ে কাকডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বের হন আর বাড়িতে ফেরেন রাত ১১টার পর। মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণে তিনি বাড়তি উপার্জনের আশায় প্রতিদিন বাড়তি পরিশ্রম করছেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের এমন সাফল্যে আমার ভাষা হারিয়ে গেছে। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আমার মা মরা মেয়ের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে যদি কোনও বিত্তবান এগিয়ে আসতেন, তবে অনেক উপকার হতো।
শাপলা বলেন, আমাদের দারিদ্রতার কারণে আমার শিক্ষক মঈন স্যার বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। কমল স্যারও নামমাত্র টাকায় আমাকে পড়াতেন। তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
শিক্ষক মঈন উদ্দিন বলেন, শাপলা অনেক মেধাবী। আমার বিশ্বাস ছিল সে পড়ালেখা করে ভালো কিছু করবে। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, একটা মেধাবী শিক্ষার্থীর মেধার মূল্যায়ন হবে না এটা হতে পারে না।
শিক্ষক কমল বলেন, পড়াশোনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ এবং ভালো কিছু করার বাসনা ওর মধ্যে সবসময়ই ছিল। শাপলা আমাদের স্কুলের গর্ব।
এলাকার পল্লী চিকিৎসক মাসুদ রানা বলেন, আমাদের এই গ্রাম থেকে এই প্রথম কোনও মেয়ে মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। তবে অর্থের অভাবে এই অদম্য মেধাবীর মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও পড়াশোনা এখানেই থেমে যাবে ভেবে খারাপ লাগছে। শাপলার বাবা শফিকুল ইসলাম অটোরিকশা চালক। পড়াশোনার এতো খরচ তিনি কীভাবে বহন করবেন জানি না। এ কারণে শাপলা ও তার বাবার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।