জুমবাংলা ডেস্ক : সন্তান হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে তার ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন রাজধানী উত্তরায় জুলাই আন্দোলনে শহিদ ছাত্র-জনতার পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার উত্তরার আজমপুরের শহিদ মুগ্ধ মঞ্চে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ, ছত্রিশের সাহসিনী ও গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সম্মেলনে শহিদ পরিবারের সদস্যরা এ দাবি জানান।
এসময় তারা অভিযোগ করেন, সরকার শহিদদের ভুলে গেছে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করে না। শহিদদের হত্যায় জড়িত পুলিশদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অন্য আসামিরা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক শহিদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার বলেন, আমি আমার মেয়েকে মিছিলে যেতে দেইনি। তাকে সারাক্ষণ বাসায় রেখেছি। কিন্তু বাসায় রেখেও মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। একপর্যায়ে আইনুন নাহার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি কোথাও পুলিশ দেখলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা। তারা আমার মেয়েকে কতটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে।
শহিদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা জীবনের পরোয়া করে নাই। আমাদের দুই হাজারের অধিক ছেলে-মেয়ে শহিদ হয়েছে। গুলি খাওয়া ছেলের লাশ বাবা-মার সামনে কেমন তা একমাত্র শহিদ পরিবাররা জানে। আমাদের চোখের পানি কখনো থামবে না। অথচ এই অবস্থায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। দুইটা মসজিদ থেকে আমাকে খাটিয়া দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমি উপদেষ্টাদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই আপনারা শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়ান ও আহতদের চিকিৎসা করুন। আপনারা আমাদের সন্তানদের খুনিদের বিচার করুন। খুনি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার ফাঁসি কার্যকর করুন।
শহিদ জাবির ইব্রাহীমের মা রোকেয়া বেগম বলেন, আমার জাবিরকে কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন? জানি কেউ পারবেন না। কিন্তু আওয়াজ তুলুন। আমার জাবিরের হত্যার বিচার চাই। আমার জাবিরের মত সকল জাবিরের হত্যার বিচার চাই।
জাবির ইব্রাহীমের বাবা কবির হোসেন বলেন, দুই হাজার ছাত্র-জনতা যদি শহিদ হয় তাহলে দুই হাজার পুলিশ খুনি। কিন্তু আমরা কি দুই হাজার পুলিশকে গ্রেফতার হতে দেখেছি?
শহিদ সিফাত হাসানের বাবা বলেন, আমার ছেলে সিফাত ২০ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে শহিদ হয়। আমাদের যে দুই হাজার ছেলে-মেয়ে নিহত ও ৩০ হাজার আহত হলো এর বিচার আর হবে কিনা আমি জানিনা। এই সরকার টাকা দিয়ে আমাদের সন্তানদের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না। আমরা কেবল আমাদের সন্তানদের খুনিদের বিচার চাই।
শহিদ মীর মুগ্ধ’র বাবা মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলন প্রথমে ছিল যৌক্তিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন। কোনো গণতান্ত্রিক সরকার যৌক্তিক আন্দোলনে গুলি চালাতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য না। আমি আশা করি এই সরকার আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করবে। ছাত্রদেরকে যে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে তার বিচার করা হবে।
শহিদ মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের মা জানান, আমার একমাত্র সন্তান ইয়াসিন। তাকে সুস্থ অবস্থায় পিটিয়ে পিটিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচারের জন্য মামলা করতে গিয়ে থানায় সীমাহীন দুর্ভোগ ও অবহেলার শিকার হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অপরাধীরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছে না। পুলিশ বলছে সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপি হয়ে গেছে।
সম্মেলনে শহিদ পরিবারের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- শহিদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, শহিদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের বোন জেসিকা জামান, শহিদ শাফিক উদ্দীন আহনাফের মা জারতাজ পারভীন, শহিদ রিদোয়ান শরীফ রিয়াদের ছোট বোন শিমু আহমেদ, শহিদ রায়হানের ছোট বোন স্বর্ণা আক্তার, শহিদ সাইফ আরাফাত শরীফের বোন কামরুন্নাহার, শহিদ শাহাদাত হোসেন শাওনের বাবা বাছির আলম, শহিদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল প্রমুখ।
গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাবেয়া আক্তারের সভাপতিত্বে ও ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিসুর রহমান, সাংগঠনিক প্রধান শফিউর রহমান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- জুলাই বিপ্লবের সকল শহিদ পরিবার যথাযথ মর্যাদা ও আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ, উত্তরায় একটি শহিদ স্মৃতি পাবলিক লাইব্রেরি ও শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের মানসিক সাপোর্ট টিম গঠন এবং জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসে নারী ও শিশুদের অবদান তুলে ধরতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।