জুম-বাংলা ডেস্ক: ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নলিতাবাড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া শ্রীবরদীতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ঝিনাইগাতীর মহারশি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীর পানি বেড়ে গিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙে ও পাড় উপচে উপজেলা সদর বাজারসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে প্রবেশ করেছে পানি। এ ছাড়া নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকায় পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসাথে বেড়েছে মহারশি, সোমেশ্বরী, মৃগী ও পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
শ্রীবরদীতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী
শ্রীবরদী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের শ্রীবরদীতে একদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তা ডুবে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে ধান খেত, ভেসে গেছে মৎস্য খামার। পানি উঠেছে বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। হঠাৎ আকস্মিক বন্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে লোকজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাবের আহমেদ বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, পানিবন্দী পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়ন ও সিংগবরুণা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বালিজুড়ি, মালাকোচা, হালুয়াহাটি, বিলভরট, চক্রপুর, টেঙ্গরপাড়া, ভায়াডাঙ্গা বাজার, আশান্দিপাড়া, শিমুলকুচি, রানীশিমুল, কর্ণঝোড়া, মাটিফাটা, বড়ইকুচিসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ভায়াডাঙ্গা বাজারের সাথে কর্ণঝোড়া, বালিজুড়ি ও ঝিনাইগাতির রাস্তা পানিতে তলিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বালিজুড়ি, কর্ণঝোড়া ও ভায়াডাঙ্গা বাজারের বিভিন্ন দোকানে পানি উঠে মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, সবজিক্ষেত, মৎস্য খামার, পুকুর, পোলট্রি খামারসহ বিভিন্ন মালামাল পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকার লোকজন গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। হালুয়াহাটি গ্রামের কাশেম মিয়া বলেন, ভোরে হঠাৎ বাড়ি উঠানে পানি দেখতে পায়। দুপুরের দিকেই একমাত্র থাকার বসত ঘরটি প্রায় তলিয়ে গেছে। টেঙ্গরপাড়া গ্রামের মৎস্য খামারি সৈয়দ আব্দুল বাকী গালেব বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মৎস্য খামার করেছিলাম। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় দুই একর জমির খামারের মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, ৫০টির বেশি মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে তারা। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাবারিনা আফরিন বন্যকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৬১ হেক্টর জমির সবজি খেত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ১ হাজার ১৮৫ হেক্টর আমন ধান ও ৬৪ হেক্টর জমির সবজি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সময় যত যাচ্ছে পানি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নালিতাবাড়ীর ৯ ইউনিয়ন প্লাবিত
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৭ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ ভেঙে ও নদীরপাড় গড়িয়ে পানি উপচে পড়ছে। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। চেল্লাখালী নদীর পানি ২১ দশমিক ৯৫ মিলিমিটার ও ভোগাই নদীর পানি ১ হাজার ৭১৪ মিলিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নদী দুটির পানি বাড়তে শুরু করে। রাতে পানির তোড়ে পোড়াগাঁও, নন্নী, নয়াবিল, কাকরকান্দি, রামচ›ন্দ্রকুড়া, মরিচপুরান, রূপনারায়ণকুড়া, যোগারিয়া ও বাঘবেড় ইউনিয়নসহ পৌরসভার গড়কান্দা ও নিজপাড়া, চকপাড়া ও তারাগঞ্জ দক্ষিণ বাজার এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।