জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছেন লক্ষ্মীপুরের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য শিফা মিজি। সকাল হলেই পরনে লাল শাড়ি, হাতে লাঠি ও মুখে বাঁশি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে রাস্তায় নামেন তিনি। তার এ উদ্যোগ পথচারী, যানবাহনের চালকসহ সর্বসাধারণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে পেট ভরে খাবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট বেতনের কর্ম খুঁজছেন তৃতীয় লিঙ্গের এ সদস্য। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিধবা মায়ের মুখে অন্ন জোগাতে এখন স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ চান তিনি।
জানা যায়, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা তুলেই জীবন চালায় বেশিরভাগ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই কাজ করে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা শিফা। ২০০৬ সালে ব্লাড ক্যান্সারে বাবা আমির হোসেনের মৃত্যুর পর কাজ করেছেন বাসা-বাড়িতে। ২০১২ সালে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় একটি ইন্ডাস্ট্রিজে ১ হাজার ৮শ টাকা বেতনে চাকরি নেন। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে চাকরি হারান তৃতীয় লিঙ্গের এ সদস্য। সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ থেকে এক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের দালালবাজারে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার নিরলস দায়িত্ব পালনে খুশি চালক, পথচারী ও সাধারণ মানুষ।
যানবাহন চালকরা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরের উপশহর দালাল বাজারের এ পথে ঢাকা, চট্রগ্রাম, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। আগে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত এই বাজারে। বেশ কিছু দিন থেকে শিফা নিজ উদ্যোগে যানবাহন পারাপার করে দিচ্ছেন। তার এ উদ্যোগের ফলে তারা দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন।
শিফা মিজি জানান, সংসারে তার মা ও দুই ভাই রয়েছে। তবে তাদের ঘর-বাড়ি নেই। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করার সুবাধে ওই বাড়িতে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসবাস করেন। মা ও ছোট ভাইদের মুখে অন্ন তুলে দিতে দালালবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আলাপ করে যানজট নিরসনে কাজ শুরু করেন তিনি।
তিনি যানজট নিরসনে কাজ করেন বলে অনেক চালক স্বেচ্ছায় তাকে ৫-১০ টাকা করে দেন। আবার স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা খুশি হয়ে ৫০০-১০০০ টাকা দেন। সে টাকাতেই তার জীবন চলে। এখন একটি স্থায়ী চাকরি চান তৃতীয় লিঙ্গের এই সদস্য।
এদিকে সরকারিভাবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ চলছে শিফাদের। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং বাজার কমিটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, নিজ উদ্যোগেই এতদিন ধরে বাজারে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন শিফা। অথচ বিনিময়ে তিনি কিছুই পান না। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। সবাই মিলে আর্থিকভাবে সহায়তা করলে তার উপকার হবে। তবে সরকারিভাবে স্থায়ী কর্মসংস্থানের দাবি জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, দীর্ঘদিন থেকে নিজ উদ্যোগে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন শিফা। বিনিময়ে সে ট্রাফিক বিভাগ বা পুলিশের কাছে কিছু দাবি করেনি। সে মানব সেবা করার জন্য কাজটি করছে। তার মতো তৃতীয় লিঙ্গের অন্য সদস্যরা যদি কর্মে ফিরে আসে, তাহলে মানুষও তাদের ভালো চোখে দেখবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।