বিনোদন ডেস্ক : দেশের প্রচলিত আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ হলেও নানা কৌশলে অনলাইন জুয়ার প্রচার ও প্রসার চলছে। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে বিভিন্ন লোভনীয় অফার। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে শোবিজ তারকাদের। তাঁদের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এই টাকা ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। সম্প্রতি শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রচারে দেখা গেছে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও পরীমণিকে। নাম এসেছে বুবলীরও। শোবিজ তারকাদের এমন প্রচার শিল্পী হিসেবে তাঁদের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
গত ১৮ মে একটি অনলাইন জুয়া প্রতিষ্ঠান শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও শবনম বুবলীর নাম ঘোষণা করে। প্রতিষ্ঠানটির এমন ঘোষণার সপ্তাহখানেক পর, গত ২৫ মে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় মাহিয়া মাহি তাদের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার খবর জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি অবৈধ কিছু করেননি! তিনি জানান, এটা ‘ক্রিকেট রিলেটেড ইনফরমেটিভ প্ল্যাটফর্ম’, কোনো জুয়া প্রতিষ্ঠানের সাইট নয়। কিন্তু মাহির পোস্টে প্রচার করা প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে গেলে জুয়ার বিভিন্ন অফার চোখে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিক ফোন কল ও এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি।
গত মার্চে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে চিত্রনায়িকা পরীমণির নাম ঘোষণা করে আরেকটি জুয়া প্রতিষ্ঠান। ২ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ওই প্রতিষ্ঠানের একটি বিজ্ঞাপন পোস্ট করে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিটের আমন্ত্রণ জানান পরীমণি। এ বিষয়ে জানতে ফোন কল করা হলে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কে বলেছে এটা জুয়া কোম্পানির ওয়েবসাইট? ভালো করে খোঁজ নিয়ে ফোন করুন।’ এরপরই সংযোগ কেটে দেন তিনি। পরীমণি অস্বীকার করলেও ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চলছে জুয়ার বিভিন্ন লোভনীয় অফার।
এর আগে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ এমন সাইটের বিজ্ঞাপন ও শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নাম জড়িয়েছে জয়া আহসান, অপু বিশ্বাস ও নুসরাত ফারিয়ার। এর মধ্যে জয়া ও ফারিয়াকে শুধু বিজ্ঞাপনে পাওয়া গেলেও অপু কাজ করেছেন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। পরে তাঁরা জানান, ভুল তথ্যে এগুলোতে জড়িয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদে নৈতিকতা রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া, ১৮৬৭ সাল থেকে চালু প্রকাশ্য জুয়া আইন অনুসারে, কেউ টাকার বিনিময়ে বাজি বা জুয়ার আসর বসালে এবং কেউ তাতে অংশ নিলে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২০১৪ সালের ১৮ জুন জুয়াবিরোধী একটি রায় দেন। তাতে বলা হয়, অর্থ দিয়ে সব খেলাই অবৈধ। ১৮৬৭ সালের আইনটি যুগোপযোগী করতে সরকার ‘জুয়া প্রতিরোধ আইন’ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জুয়ার সাইটের কেউ প্রচারক হলে বা শুভেচ্ছাদূত হলে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কঠিন কোনো আইন নেই। এই ফাঁকফোকর দিয়ে তাঁরা বের হয়ে যান। প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা দেওয়া যায়। কিন্তু বিজ্ঞাপনে মডেল হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সমাজের প্রতি তারকাদের দায়িত্ব রয়েছে, সেই দায়বদ্ধতা থেকে এগুলো তাঁদের বন্ধ করা উচিত।
সাইটভিত্তিক জুয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে। অর্থ পাচার এবং উগ্রবাদে এসব জুয়ার ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহৃত হয় বলে নজরদারিও করে ডিএমপির এই বিশেষ ইউনিট। এর প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু কারও করা উচিত না। আমাদের সাইবার ইউনিট সব সময় মনিটরিং করে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। কেউ বেআইনি কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিনেত্রী ও নির্মাতা রোজিনার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের অন্যায় বা অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে শিল্পীদের সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয়। তবে এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, ইদানীং এসব নিয়ে কথা বললে উল্টো সমালোচিত হতে হয়। এসব নিয়ে গণমাধ্যমগুলো তাদের ভূমিকা পালন করলেই ভালো।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহসভাপতি ও অভিনেতা ডিএ তায়েব বলেন, ‘সব অনিয়মের বিপক্ষে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। কোনো শিল্পী যদি জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকেন সেটা অন্যায়। শিল্পীদের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে বলেই তাঁরা আইডল হন। সেই দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। সে জন্য বিজ্ঞাপন বা শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত হওয়ার আগে যাচাই করে নেওয়া উচিত প্রতিষ্ঠানটি মানব কল্যাণের কি না। যদি কোনো ক্ষতিকর কিছু থাকে তাহলে সেটা থেকে বিরত থাকাই ভালো। আইনে কিন্তু স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ক্ষতিকারক প্রোডাক্ট কিংবা কোনো অন্যায়কারীর পক্ষে কাজ করলে আপনিও সমান অপরাধী। মনে রাখতে হবে, শিল্পীদের কাছে অর্থটা মুখ্য হওয়া উচিত নয়।’
সূত্র : আজকের পত্রিকা
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.