লাইফস্টাইল ডেস্ক : বয়স বাড়ার একটি প্রাকৃতিক লক্ষণ হচ্ছে চুল পাকা। অনেকে মনে করেন, চুল টেনে তুললে পাকার পরিমাণ বাড়ে।আসলে তা নয়, তবে অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত বয়স ৩০ পার হওয়ার পর চুল পাকতে দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে আরও কম বয়সে হতে পারে। বেশিরভাগ লোক পাকা চুল রং দিয়ে ঢেকে রাখতে পছন্দ করেন। তবে কেউ কেউ আছেন পাকা চুল টেনে তোলেন, যা ঠিক না।
চুল পাকার কারণ
ভারতীয় ত্বক বিশেষজ্ঞ সমির আপ্তে বলেন, মেলানিনের উৎপাদন ও পিগমেন্টেইশন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। ফলে চুল সাদা হয়ে যায়।
হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও জানান, প্রতিটি চুলের ফলিকলে পিগমেন্টেইশন তৈরিকারক কোষ মেলানোসাইটিস রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কোষের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমে। ফলে মেলানিন উৎপাদন হ্রাস পায় এবং চুল ধূসর অথবা সাদা হয়ে যায়।
প্রাকৃতিক বয়স বৃদ্ধি ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণে চুল সাদা হতে পারে যেমন- বংশগতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ধূমপান, পুষ্টির ঘাটতি- বিশেষত ভিটামিন বি ১২ এবং খনিজ উপাদান যেমন- লৌহের ঘাটতি এবং মানসিক চাপ চুল পাকার অন্যতম কারণ।
পাকা চুল তুললে কি আরও চুল পাকে?
প্রায়ই শোনা যায় যে, একটি পাকা চুল টেনে তুললে আশপাশের চুলগুলো পাকা বা সাদা হয়ে যায়। এটা আসলে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা।
ডা. আপ্তে বলেন, চুল টেনে তোলার ফলে কোনোভাবেই আশপাশের চুলের ফলিকলকে প্রভাবিত করতে পারে না অথবা চুলের রংয়ের জন্য দায়ী মেলানোসাইটিসের ওপর প্রভাব রাখে না। প্রত্যেকটা চুলের ফলিকল স্বকীয় এবং অন্য চুল আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী নয়।
যেহেতু চুল পুনরায় গজায় তাই নতুন চুলে অনেক ক্ষেত্রে পিগমেন্টেইশন হ্রাস পেতে পারে। ফলে ধূসর বা সাদা দেখায়। এই কারণে অনেকে ভেবে থাকেন, পাকা চুল তোলাতে আরও পাকা চুলের জন্ম দেয়। তবে চুল পাকা আর বৃদ্ধি হওয়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
তবে নিয়মিত পাকা চুল টেনে তোলা চুলের ফলিকলকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে কারণে চুল পড়ার পাশাপাশি আরও নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পাকা চুল তোলার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পাকা চুল টেনে তোলার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন-
সংক্রমণের ঝুঁকি: চুল টেনে তোলার ফলে এর ফলিকলে ব্যাক্টেরিয়া জমাট বাঁধতে পারে যা পরে লালচে, ফোলাভাব অথবা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এটা এক ধরনের চুলের ফলিকলের সংক্রমণ বা প্রদাহ, এর ফলে অনেক সময় মাথার ত্বকে ব্রণের মতো দানাদার অংশ দেখা দেয়।
অন্তর্বর্ধিত চুল: পাকা চুল টেনে তোলা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির গতি বা দিক পরিবর্তন করতে পারে। ফলে ছোট ছোট চুল দেখা যায়, যা অনেক সময় ত্বকে লালচে ভাব, প্রদাহ এমনকি সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
ত্বকের জ্বলুনি: চুল টেনে তোলার ফলে মাথার ত্বকে জ্বলুনি দেখা দেয়। ফলে লালচে-ভাব, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে। ত্বক সংবেদনশীল হলে এক্ষেত্রে অনেক বেশি সাবধানে হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
ফলিকলের ক্ষয়: খুব বেশি পাকা চুল টেনে তোলা চুলের ফলিকলের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে চুলের বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে তা স্থায়ী চুল পড়ার কারণও হতে পারে।
হাইপার পিগমেন্টেইশন অথবা দাগ: দীর্ঘদিন ধরে চুল টেনে তোলার অভ্যাস থাকলে মাথার ত্বকে কালচে দাগ হতে পারে। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা দেয় যা সার্বিক ত্বকের ওপর এবং ভবিষ্যতে চুলের বৃদ্ধির ওপর প্রভাব রাখতে পারে।
চুলের মানের পরিবর্তন: চুল টেনে তোলার ফলে লোমকূপ বড় হয়ে যেতে পারে। ফলে পুনরায় চুল গজানোর সময় সাধারণ পূর্বের চুলের থেকে অনেক বেশি মোটা হয়ে গজাতে পারে।
চুলের অসম বৃদ্ধি: চুল টেনে তোলার ফলে এর প্রাকৃতিক বৃদ্ধি চক্র ব্যাহত হয়। ফলে একেক চুল একেক গতিতে বাড়ে। চুলের এই অসম বৃদ্ধির ফলে চুলের গঠন ও আকারেও দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে।
পাকা চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
সাদা চুল রং করতে চাইলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এতে চুল রং হওয়ার পাশাপাশি সুস্থও থাকবে।
পাকা চুল শুষ্ক হয়ে যায়। তাই এর আর্দ্রতা রক্ষার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বাছাই করতে হবে যা পাকা চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি চকচকেভাব আনতে সহায়তা করে।
সূর্যালোকের কারণে হওয়া ক্ষয় কমানোর চেষ্টা করতে হবে। টুপি পরে বা অন্য কোনো চুলের প্রসাধনীর সাহায্যে চুলকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। চুল ভালো রাখতে দীর্ঘসময় সূর্যালোকে না থাকা অথবা সুরক্ষার স্তর অবলম্বন করা জরুরি।
পাকা চুলের আগা ফাটাভাব কমাতে মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। জট ছাড়াতে, জোরে আঁচড়ানো এড়াতে বিশেষ করে চুল ধোয়ার পরে এমন চিরুনি সহায়তা করে। চুল ভালো রাখতে স্টাইলিংয়ে যতটা সম্ভব তাপীয় যন্ত্রের ব্যবহার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
নিয়মিত আগা ছাঁটা চুলের ভঙ্গুরভাব কমায় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর চুলের রুক্ষতা ও মলিনভাব কমে।
ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়া চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ই, ভিটামিন বি ১২, লৌহ এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া সার্বিকভাবে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।
উন্নতমানের ও পাকা চুলের জন্য তৈরি এমন প্রসাধনী ব্যবহার করা প্রয়োজন। এসব প্রসাধনীতে চুলের হলদেভাব হ্রাস ও রূপালীভাব ফুটিয়ে তোলার উপাদান যোগ করা থাকে।
তাই পাকা চুল তুলে ফেলার পরিবর্তে বরং প্রাকৃতিক রংয়ের প্রভাব ফুটিয়ে তোলার বিষয়টা বিবেচনা করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।