জুমবাংলা ডেস্ক : গ্রামীণফোনের সিমের সেবার নামে হয়রানিতে নতুন যোগ হলো ‘মালিকানা পরিবর্তন’। গ্রাহক অনলাইনে মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করলেন। পরিবর্তনের ফি কেটে নেয়া হলো। গ্রামীণফোন নিজে পরিবর্তন করে না। থার্ড পার্টি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় পেপারফ্লাইকে। পেপারফ্লাই কর্মী গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিলো। আঙুলের ছাপ নেয়ার আগে সচল সিম ছিল। ছাপ নেয়ার পর মালিকানা পরিবর্তন তো হয়নি, উল্টো সচল সিম নষ্ট হয়ে গেছে। উল্টো পেপারফ্লাই টাকা নিলো। গ্রাহক মালিকানা পরিবর্তনের নামে গ্রামীণফোনের ‘মশকারা’ আর হয়রানির এমন অভিযোগ করেছেন। পেপারফ্লাই বলছে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির সিস্টেমের কারণে এমন হতে পারে। আর গ্রামীণফোনের কাছে এর কোনো সদুত্তর নেই।
দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা শেয়ার বিজ এর সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখের শেষের পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এমনি তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, কোম্পানি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কয়েকজন গ্রামীণফোন সিম ব্যবহারকারী তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়ে শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন। মুহাম্মদ রহমত উল্যাহ নামে একজন ব্যবহাকারী তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধিত একটি গ্রামীণ সিম তার স্ত্রীর নামে নিবন্ধন করে দিতে গেলে বাধে বিপত্তি। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি গত ১২ জুলাই আমার ০১৭১৫-৫২০৫৫৮ সিমটি মালিকানা পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণফোনের অনলাইনে আবেদন করি। সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণফোন থেকে আমাকে মেইল করা হয়। যাতে গ্রামীণফোন থেকে আমার মেইলে ‘অনলাইন অর্ডার কপি’ ও ‘ট্যাক্স ইনভয়েস’ পাঠানো হয়। ২-৩ কর্ম দিবসের মধ্যে ৮০ টাকা ডেলিভারি চার্জের বিনিময়ে মালিকানা পরিবর্তন করা হবে বলে জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময় আমাকে মেসেজের মাধ্যমে জানানো হয় যে আমার সিমটি পেপারফ্লাই নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাজ্জাদ হোসেন নামক একজন কর্মীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে; যার পার্সেল নম্বর ২০২৩০৭০৯০০০৭১৪। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পেপারফ্লাইয়ের সাজ্জাদ হোসেন আমার বাসার ঠিাকানায় সিমটি নিয়ে আসেন। তিনি এসে আমার সিমটির মালিকানা আমার স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে করতে তার মোবাইলে সেট করেন। এরপর সিমটি ফোনে লাগালে আর
সচল চালু হয়নি। অথচ মালিকানা পরিবর্তনের আগেও আমার সিমটি আমার ফোনে সচল ছিল। পরবর্তীতে সেই সাজ্জাদ হোসেন আমাকে বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিমটি সচল হয়ে যাবে। ২৪ ঘণ্টা পার হলেও সেই সিমটি আর সচল হয়নি। এখন পর্যন্ত সেই সিমটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এই সিমে আমার বহু পরিচিত এবং আত্মীয়স্বজন ফোন দিতো। এখন তো তারা আর এই সিমে ফোন দিয়ে পাবে না।’
রহমত বলেন, ‘আমি যে ৩৫০ টাকা খরচ করলাম এই টাকার দায়ভারই বা কে নেবে? টাকার মায়া যদিও ছেড়ে দিয়েও বলি তাহলে, এই যে আমার একটা সিম অচল হয়ে পড়ে রইল, এর দায়ভার কে নেবে? হয় গ্রামীণফোন কোম্পানিকে নিতে হবে, নয়তো পেপারফ্লাইকে নিতে হবে। কেউ না কেউ তো এর সঙ্গে জড়িত। নাহলে আমার সচল সিম মালিকানা পরিবর্তনের পর অচল হলো কীভাবে? এটা কি গ্রামীণফোন অচল করে দিয়েছে? নাকি পেপারফ্লাই আমাকে একটি অচল সিম ২৪ ঘণ্টা পর সচল হবে বলে ধরিয়ে দিয়েছে? দায় কার?’
অপরদিকে, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরও এমন অনেকগুলো তথ্য। একে একে অভিযোগ জমা হতে থাকে। আজহারুল ইসলাম নামের একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার দুটি গ্রামীণ সিম ছিল আমার এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করা। আমার এনআইডির নম্বর ৭৩৬২৪১৭৮৭০-এ সিম দুটি নিবন্ধন করা ছিল। সিম দুটি বন্ধ করা ছিল কয়েকমাস। এখন আমি ফোন দিলে অন্য কেউ ফোন ধরে। পরে গ্রামীণফোন অফিসে কথা বলে জানতে পারলাম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে নাকি সিম অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দিতে পারে কোম্পানি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি যখন আমার এনআইডিতে নিবন্ধনকৃত সিমের তথ্য যাচাই করি, তখন গ্রামীণের সেই বন্ধ দুই সিমও দেখা যায় এখনো আমার এনআইডি দিয়েই নিবন্ধন করা রয়েছে। তাহলে সিম আমার নামে নিবন্ধিত আর ব্যবহার করছে অন্য কেউ। আমি এটা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব সিম দিয়ে অপকর্ম করা হলে তো আমিও ফাঁসব। রেজিস্ট্রেশন ফেইল হলে বা সিম নষ্ট হয়ে গেলে অটো রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা উচিত। আমি কথা বললে তারা বলে, ‘‘সিম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে বিক্রি করার অনুমোদন আছে।’’ তবে তারা রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’
এ বিষয়ে পেপারফ্লাইয়ের সেই সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি পেপারফ্লাই থেকে তিন মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ২৪ ঘণ্টা লাগার কথা না। যদি অপারেটর পরিবর্তন করা হয় তাহলে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু জিপিরি ওনারশিপ ট্রান্সফার (মালিকানা পরিবর্তন) এর ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যাওয়ার কথা। এটা হতে পারে সার্ভার সমস্যার কারণে এমন হয়েছে। বিটিআরসি আর গ্রামীণফোনের যে সার্ভার সেটার ত্রæটির কারণে মাঝেমধ্যে এমন হয়ে থাকে।
গ্রামীণফোনের পাবলিক রিলেশন ডিপার্টমেন্ট প্রধান অনকিত সুরেকা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ ব্যাপারটা আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন ডিপার্টমেন্ট দেখে। আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন ডিপার্টমেন্ট অনলাইনে মালিকানা পরিবর্তনের দায়িত্ব পেপারফ্লাই নামক কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে কি না; এটা আমার জানা নেই। আমার জানা মতে মালিকানা পরিবর্তন করতে হলে জিপি সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিয়ে করতে হয়।’ গ্রামীণফোন অনলাইনে এই সেবা চালু করেছে এবং এর বিস্তারিত তথ্য গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে আছে বলা হলে তিনি বলেন, ‘হয়তো। তবে এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’
অন্যদিকে, গত বছরের ২৯ জুন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রামীণফোনের ‘কল ড্রপ রেট কমানোসহ সেবার মান উন্নত না হওয়া পর্যন্ত’ সিম বিক্রি নিষিদ্ধ করে। পরে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞায় গ্রামীণফোন হারিয়েছে প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহক।
দুপাট্টা নামিয়ে স্টেজে দুর্দান্ত কায়দায় ড্যান্স দিলেন মুসকান বেবি
সূত্রমতে, গ্রামীণফোন দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইলফোন অপারেটর। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা আড়াই লাখ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৮ কোটি ২২ লাখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বার্ষিক ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের গ্রাহক কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। কারণ সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যে প্রভাব পড়েছিল তা থেকে এখনও পুরোপুরি উঠতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
সুত্র : শেয়ার বিজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।