জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্বাভাবিক সময়ের মত মজুদ করা ছিল ৫৫০ টনের বেশি পেঁয়াজ। গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। মজুদ করা সেই পেঁয়াজ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের।
সপ্তাহব্যাপী খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় পেঁয়াজে দেখা দিয়েছে পচন, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে ব্যাপক ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় বাজারে পানির দরে পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম এখন বেশ চড়া। দামের ফলে নাভিশ্বাস সাধারণ জনগণের।
এদিকে ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়েছে বাংলাদেশগামী পেঁয়াজের ট্রাক। রপ্তানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশগামী সব থেকে বড় পেঁয়াজের চালান আটকে আছে ভারত-বাংলাদেশের ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তে। এ সীমান্তে প্রায় ৩০টি ট্রাকে ৪৫০ টনের বেশি পেঁয়াজ পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। এছাড়াও মাহাদীপুর-সোনামসজিদ, পেট্রাপোল-বেনাপোল, হিলি সীমান্তেও আটকা পড়েছে বেশকিছু পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক।
সব মিলিয়ে যার পরিমাণ প্রায় ৫৫০ টনের বেশি।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই বিপুল এই পেঁয়াজের বিকল্প বাজার খুঁজে না পাওয়ায় ধরেছে পচন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্তে দাঁড়িয়ে থেকে পঁচে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার পেঁয়াজ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের মতই চলতি সপ্তাহে ভারতের স্থানীয় বাজার ও রপ্তানির জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাঙ্গালোর, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে পেঁয়াজ পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ঢুকেছে। এরমধ্যে আচমকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হলেও স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। ফলে সীমান্তে আটকে থাকা পেঁয়াজ অল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় বাজারেও বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় পাইকারি বাজারে বিক্রি সম্ভব হলেও তাতে কাঙ্খিত দাম মিলছে না।
ব্যবসায়ী স্বদেশ মণ্ডল বলেন, আপাতত যে কয়টি গাড়ি সীমান্ত চলে এসেছে, সেগুলি প্রায় ৭ থেকে ১৫ দিন এখানে আটকে রয়েছে। পেঁয়াজ পচনশীল দ্রব্য, তাই প্রতিদিন আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, এই গাড়িগুলি বাংলাদেশে রপ্তানি করার অনুমতি দেওয়া হোক। নয়তো প্রতি গাড়িতে আমরা ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার লোকসান হবে।
মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে পেঁয়াজ বোঝাই করে প্রায় ৭ দিন আগে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তে এসেছিলেন পাঞ্জাবের ট্রাকচালক সুকদেব সিং। রপ্তানি সম্ভব না হওয়ায় ট্রাক বোঝাই পেঁয়াজ নিয়ে সীমান্তের পার্কিংয়ে আটকা পড়েছেন তিনি। সুকদেব সিং বলেন, প্রায় সাত থেকে আট দিন আগে এখানে এসেছি। যাতায়াত নিয়ে আমাদের এক মাসের বেশি সময় নষ্ট হয়ে গেল। প্রতিমাসে গাড়ির কিস্তি এক লাখ টাকার বেশি। এর সঙ্গে প্রতিদিনের পার্কিং খরচ। আমাদের থাকা খাওয়ার খরচ। আমরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করছি, গাড়ি খালি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা রাজি হচ্ছেন না।
একই অবস্থা সীমান্তে ১০ দিনের বেশি আটকে থাকা আরেক বাঙালি ট্রাকচালক অতনু খাঁর। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে পেঁয়াজ বোঝাই এই ট্রাকের মধ্যেই থাকতে এবং খেতে হচ্ছে তাকে। আজ শনিবার দুপুরে ট্রাকের কেবিনের মধ্যে ছোট্ট জায়গায় রান্না করতে করতে বিষন্ন গলায় তিনি বলেন, দেখতে পারছেন, কিভাবে আছি। মালিকপক্ষ শুনতে চাইছে না। তারা পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পারায় গাড়ি খালি করতে রাজি হচ্ছেন না।
সীমান্তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা এখনো আশাবাদী, কিছুটা ক্ষতি মেনে নিয়ে বাংলাদেশে এই পেঁয়াজ এখনো রপ্তানি সম্ভব। কারণ, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতেই বলা আছে, কোনও দেশের সরকার অনুরোধ করলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে। তাই সরকারি অনুমতির অপেক্ষাতেই ভরসা রাখছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে না। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলা হয়েছিল। যদিও তার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় পেঁয়াজ রপ্তানি।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel