জুমবাংলা ডেস্ক : ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সম্প্রতি বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অপরদিকে, বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এ সম্মেলনে ব্যাপক আলোচনার ভিত্তিতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সীমান্তহত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর আহ্বান জানান। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো স্থায়ী স্থাপনা এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শকদলের পরিদর্শন ও যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে তা করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সীমান্তে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিজিবির মহাপরিচালক।
সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ এবং পূর্বাভাস না দিয়ে উজানে বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যা সৃষ্টি বন্ধ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়।
ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ, স্বর্ণসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির চোরাচালান রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ এবং সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়। সীমান্তে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিজিবির মহাপরিচালক।
বিএসএফ মহাপরিচালক মানুষের জীবন ও মানবাধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে সীমান্তহত্যা বন্ধে ‘অপ্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি মাদক পাচার ও চোরাচালান রোধসহ সীমান্তে শান্তির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, এমন যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সীমান্ত সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর সারসংক্ষেপ :
ক। সীমান্তে নিরস্ত্র মানুষদের ওপর গুলি চালানো/হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও আগাম গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি ও বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ এবং সীমান্তে যেকোনো হত্যা সংঘটিত হলে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
খ। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা, কাঁটাতারের বেড়া, প্রতিরক্ষা স্থাপনা বা বাংকার নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শক দলের পরিদর্শন এবং যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে নির্মাণের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজগুলোর ব্যাপারে যথোপযুক্ত পর্যায়ে জয়েন্ট ভেরিভিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
গ। বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, বিশেষ করে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও গবাদিপশু পাচার রোধ; অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ; মানবপাচার রোধ; স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধ এবং এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।
ঘ। আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিক ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের ফলে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্তে উভয় বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
ঙ। মানবপাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বিশেষ করে মানবপাচারের মতো অমানবিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত উভয় দেশের অপরাধী বা দালালচক্রের কার্যক্রম প্রতিরোধে পরস্পরকে সহায়তা এবং মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচলিত দেশের আইন অনুযায়ী উদ্ধার ও পুনর্বাসনে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
চ। আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী চারটি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত শোধনাগার স্থাপন; জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সাথে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ; আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
Infinix Smart 9 HD: কমমূল্যে 6GB RAM এর দুর্দান্ত স্মার্টফোন!
ছ। উভয় পক্ষ ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’র আওতায় পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে উভয় বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। উভয় পক্ষ আগামী দিনে যৌথ খেলাধুলা ও জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনিসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।