বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : জাপানি একটি স্টার্টআপ বা নতুন উদ্যোক্তা কোম্পানি আগামী বছর একক-আসন বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে নিয়ে এসে মোটর গাড়ি শিল্পে আলোড়ন তোলার লক্ষ্য র্নিধারণ করেছে।
কেজি মোটরস ২০২২ সাল থেকে তাদের আখ্যায়িত ‘মিনিমাম মোবিলিটি’ মডেলের গাড়ি তৈরিতে নিয়োজিত রয়েছে। কেবল ২.৫ মিটার লম্বা এবং ১ মিটার প্রশস্ত এই গাড়ির মূল্য ১ মিলিয়ন ইয়েন বা প্রায় ৬,৭০০ ডলার নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাধারণ প্যানেলের চাইতে কম উপকরণ দরকার, সেরকম রেট্রো বা বিপরীতমুখী ধারায় অনুপ্রাণিত নকশা গ্রহণ করে উৎপাদন খরচ সর্বনিম্নে কমিয়ে আনা হয়েছে।
গাড়ির জানালা ম্যানুয়েলি উঠানো-নামানো করানো যায়, যার সবটাই চালকের নাগালের মধ্যে। একইসাথে গাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার ঋতু নির্বিশেষে চালকের জন্য আরাম নিশ্চিত করেছে।
কেজি মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কুসুনোকি কাযুনারি একটি যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চালাতেন। তবে নিজে একটি মোটরগাড়ি কোম্পানির মালিক হতে পারার স্বপ্নের পেছনে ছুটে ২০১৮ সালে তিনি সেই কোম্পানি বিক্রি করে দেন।
“জাপানে আমাদের মত গতিশীল স্টার্টআপ খুব কমই আছে,” বলেছেন কুসুনোকি কাযুনারি। “তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনে যেমন ক্রমাগত স্টার্টআপ চালু হচ্ছে; এটা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে আমরাও জাপানে এরকম করতে পারি।”
কেজি মোটরস নামটির “কেজি” অক্ষর দুটির অর্থ হচ্ছে কুসুন গ্যারেজ, কুসুনোকির ডাকনাম অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া একটি শব্দ।
কুসুনোকি কার্বন মুক্তকরণের বিশ্বব্যাপী প্রবণতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইভি’র দিকে নজর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর তাই নিজের একআসন বিশিষ্ট গাড়ির বিষয়ে নিজস্ব হোম ওয়ার্ক তিনি সম্পন্ন করেন।
একআসনের ধারণা
কুসুনোকি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের একটি জরিপ বিবেচনা করে দেখেছেন। এতে দেখা যায় যে, জাপানে প্রায় ৭০ শতাংশ গাড়ির মালিক বলেছেন, সপ্তাহের কাজের দিনগুলোতে তারা একা গাড়ি চালান। সপ্তাহান্তে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।
কুসুনোকি’র গাড়ি একই সাথে এরকম একটি মানদণ্ডও পূরণ করেছে, যেখানে গাড়ির পরিদর্শন খরচ ও কর হ্রাস করারও সুযোগ এনে দিয়েছে। এরপর ২০২০ সালে জাপান সরকার একটি আইন সংশোধন করেছে, যেটি জনসাধারণের রাস্তায় একক-আসনের ইভি চালানোর পথ খুলে দেয়।
স্টার্টআপ চ্যালেঞ্জ
স্টার্টআপ কোম্পানিসমূহের জন্য অত্যন্ত কঠিন হিসাবে বিবেচিত একটি বাজারে ক্রমশ এই প্রতিষ্ঠান বিকশিত হচ্ছে।
ৎসুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ইশিদা হারুও ব্যাখ্যা করেছেন যে, স্টার্টআপ কোম্পানির জন্য সরবরাহকারী নিশ্চিত করে নিতে পারা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেছেন, “বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইভি’তে যন্ত্রাংশ কম থাকলেও, এদের খুবই অগ্রসর প্রযুক্তির যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। আর জাপানে ছোট গাড়ির জন্য যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা খুব বেশি নেই। স্টার্টআপের জন্য এটা বড় ধরণের মাথা ব্যথা হয়ে উঠতে পারে”।
“একটি রোমাঞ্চকর গাড়ি”
কেজি মোটরস হিরোশিমায় অবস্থিত, যা একটি ভৌগলিক সুবিধা তাদের দিয়েছে। এই অঞ্চলে মাজদা’র সদর দপ্তর এবং তাদের অনেক সহযোগী কোম্পানি রয়েছে — যাদের মধ্যে কয়েকটি কেজি মোটরসকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
কুসুনোকি তার গাড়ি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গুঞ্জন বা বাজ তৈরির চেষ্টাও করছেন৷ তার ইউটিউব চ্যানেলের গ্রাহক সংখ্যা হচ্ছে ২ লক্ষের কাছাকাছি।
ইউটিউবের কিছু গ্রাহক, এমন কী গাড়ি তৈরির কাজে সাহায্য করতে তালিকাভুক্ত হয়ে মোটরগাড়ি নির্মাণ ও সফটওয়ার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দিয়ে সহায়তা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন।
কুসুনোকি বলেছেন, “সবচেয়ে ভাল দিকটি হলো আমরা একটি রোমাঞ্চকর গাড়ি তৈরি করছি এবং চালকরা যদি প্রতিদিন এটা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকেন, তাহলে এরফলে বিশাল পরিমাণে কার্বন মুক্ত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে আমরা সহায়তা করতে পারবো।”
ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়া’সহ আরামদায়ক বসার জায়গা ও সেই সাথে পেট্রোলের জন্য কোনও রকম খরচ না থাকায় কেজি মোটরস’এর গাড়ি আগামী দিনে চোখে পড়ার মতো একটি আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।