ধর্ম ডেস্ক : শিশুদের প্রতি রাসুল (সা.)-এর গভীর ভালোবাসা ছিল। তিনি তাদের খুব আদর-স্নেহ করতেন। হাসিমুখে কথা বলতেন। কোমল আচরণে তাদের হৃদয় জয় করতেন।
মায়া-মমতার ক্ষেত্রে তিনি পৃথিবীতে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এসংক্রান্ত পাঁচটি হাদিস উল্লেখ করা হলো—
১. শিশুদের আদর স্নেহ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) আদর করে শিশুদের চুম্বন করতেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় গুণ। কোমল হৃদয়ের পরিচায়ক।
আয়েশা (রা.) বলেন, এক বেদুইন রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আপনারা শিশুদের চুম্বন করে থাকেন, কিন্তু আমরা ওদের চুম্বন করি না। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে রহমত উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তোমার ওপর (তা ফিরিয়ে দেওয়ার) অধিকার রাখি? (বুখারি, হাদিস : ৫৫৭২)
২. শিশুদের খোঁজখবর নেওয়া
রাসুল (সা.) শিশুদের খোঁজখবর রাখতেন। তাদের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতেন। এটি শিশুর মনোবিকাশে সহায়ক।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সবার চেয়ে বেশি সদাচারী ছিলেন। আমার একজন ভাই ছিল, তাকে আবু উমায়র বলে ডাকা হতো। আমার অনুমান যে সে তখন মায়ের দুধ খেত না। যখনই সে তার কাছে আসত, তিনি বলতেন, হে আবু উমায়র! তোমার নুগায়র কী করছে? সে নুগায়র পাখিটা নিয়ে খেলত। আর প্রায়ই যখন নামাজের সময় হতো, আর তিনি আমাদের ঘরে থাকতেন, তখন তার নিচে যে বিছানা থাকত, সামান্য পানি ছিটিয়ে ঝেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিতেন।
তারপর উনি নামাজের জন্য দাঁড়াতেন এবং আমরাও তাঁর পেছনে দাঁড়াতাম। আর তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭০)
৩. আদব শিক্ষা দেওয়া
রাসুল (সা.) মমতাপূর্ণভাবে শিশুদের সঠিক আচরণ শিখিয়েছেন। ছোটখাটো ভুলত্রুটি ক্ষমা করে সঠিক বিষয় বুঝিয়ে দিতেন, যা তাদের সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক হতো। উমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি ছোট ছেলে হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছোটাছুটি করত। রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার করো এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এর পর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করতাম। যার যার কাছ থেকে আহার করা। (বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৪)
৪. শিশুদের কষ্ট না দেওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত নামাজের প্রতিটি অংশে পরিমিত সময় বরাদ্দ রাখতেন। কিন্তু কখনো কখনো বিশেষ পরিস্থিতিতে নামাজ দীর্ঘ করতেন। একদিন ইশার নামাজে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাতি পিঠের ওপর ওঠার কারণে তিনি সিজদা দীর্ঘ করেছেন। তাড়াহুড়া করে উঠতে অপছন্দ করেছেন—যেন বাচ্চার কষ্ট না হয়।
শাদ্দাদ (রা.) বলেন, একদিন ইশার নামাজে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে বেরিয়ে এলেন। তখন তিনি হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে বহন করে আনছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সামনে অগ্রসর হয়ে তাকে রেখে দিলেন। তারপর নামাজের জন্য তাকবির বললেন এবং নামাজ আদায় করলেন। নামাজের মধ্যে একটি সিজদা লম্বা করলেন। (হাদিসের বর্ণনাকারী বলেন), আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা ওঠালাম এবং দেখলাম, ওই ছেলেটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিঠের ওপর রয়েছে। আর তিনি সিজদারত। তারপর আমি আমার সিজদায় গেলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষ করলে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আপনার নামাজের মধ্যে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোনো ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার ওপর ওহি নাজিল হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনোটাই ঘটেনি; বরং আমার এই সন্তান আমাকে সওয়ারী বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যেন সে তার কাজ সমাধা করতে পারে। (নাসাঈ, হাদিস : ১১৪১)
২৬ ঘণ্টা পর রেলওয়ের কর্মবিরতি স্থগিত, সকাল থেকে সারা দেশে চলবে ট্রেন
৫. উত্তম ব্যবহার করা
শিশুদের কথা, কাজ ও চলাফেরা সব কিছুতেই ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তাদের ভুলভ্রান্তির জন্য কড়া ধমক দেওয়া বা অতিরিক্ত শাসন করা ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি শিশুর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমি ১০ বছর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমত করেছি। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আমাকে উহ শব্দও বলেননি এবং কোনো সময় আমাকে এটা কেন করলে, ওটা কেন করোনি তাও বলেননি। ( মুসলিম, হাদিস : ৫৮০৫)
শিশুদের প্রতি দয়া, মমতা ও ভালোবাসা থাকা সুন্দর পরিবার এবং সুষ্ঠু সমাজ গঠনের অন্যতম হাতিয়ার।
শরিফ আহমাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।