বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বিশ্বায়নের প্রভাবে পৃথিবী আজ খুব ছোট হয়ে আসছে। আমরা অনেক আগে থেকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’— শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত। ফিকশন গল্পে ইউএফও কিংবা ফ্লাইং শসারের সাথে আমাদের সখ্যতা ঘটলেও বাস্তবের দুনিয়ায় সাধারণ মানুষের যাত্রা মোটে পাঁচটা ধাপে এসে পৌঁছেছে, যার অনুষঙ্গ হলো ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটের প্রতিটি ধাপকে সহজ অর্থে আমরা নির্দেশ করি ‘জেনারেশন’ শব্দের মাধ্যমে। প্রযুক্তিখাতে উন্নত কিছু দেশ ইতোমধ্যেই পঞ্চম ধাপ পেরিয়ে ষষ্ঠ ধাপে এগোচ্ছে। আমাদের ব্যাপার অবশ্য আলাদা, বাংলাদেশে এখনও সাধারণ ইন্টারনেট পরিষেবা ফোর-জি বা চতুর্থ জেনারেশনেই আটকে রয়েছে। চলুন পরিচিত হই ষষ্ঠ জেনারেশনের সাথে যার আগমনী বার্তা দিচ্ছে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে উন্নত কিছু দেশ।
৬-জি আসলে কী?
৬-জি হলো ষষ্ঠ প্রজন্মের ইন্টারনেট যা বর্তমানে সেলুলার ডেটা নেটওয়ার্ক সমর্থনকারী ওয়্যারলেসের জন্য অপেক্ষার এক নাম। ইন্টারনেটে পঞ্চম জেনারেশনের পরের ধাপ এটি।
আসলে ইন্টারনেটকে পরবর্তী ধাপে কিংবা আপডেট ভার্সনে পরিচিত দেয়ার অন্যতম উপাদান হলো এর গতি। গতি যদি গতানুগতিক না হয়ে দ্রুতগামী হয় তাহলে দাবী করা যায় পরবর্তী জেনারেশনের আবির্ভাব ঘটেছে বা পরের ‘জি’ এসে গেছে।
৬-জি ইন্টারনেটের একটি নমুনা ডায়াগ্রাম।
যারা কাজ করছে ৬-জি প্রযুক্তি নিয়ে
চলতি বছর ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেট ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ঝড় তুলে ফেলেছে। কিন্তু সেই ঝড়কেও টেক্কা দিয়ে আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেট ছেড়েছে চীনের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গিস্পেস। তাদের দাবী, তারাই সর্বপ্রথম ৬-জি ইন্টারনেটের একটি পরীক্ষামূলক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্মাতা চ্যাং গুয়াংয়ের মতে, তাদের স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ গিগাবাইট ডেটা স্থানান্তর করতে সক্ষম।
এটি নিয়ে কাজ করছে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন ও জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছে। সেখানকার গবেষকদের দাবী তারা এমন একটি সিলিকন-ভিত্তিক মাইক্রোচিপ তৈরি করেছেন,যা প্রতি সেকেন্ডে ১১ গিগাবাইট গতিতে ডেটা প্রেরণ করে, যেখানে ৫-জি’র তাত্ত্বিক সীমা ১০ জিবিপিএস।
দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৬ সালে ৬-জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি উন্মোচন করার ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশটির বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘কে-নেটওয়ার্ক ২০৩০’ কৌশল নামে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করে।
স্পিড মিটারে ইন্টারনেটের গতি।
৬-জি যেভাবে কাজ করবে
জননিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সুরক্ষার জন্য সরকার এবং শিল্পখাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং গতিশীলতা আনবে ৬-জি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের দ্রুত নিষ্পত্তি ঘটানোর পাশাপাশি হুমকি সনাক্তকরণে অনলাইন জগতে নতুন দিগন্ত আনবে। স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুনত্ব আনবে এই পরিষেবা। আজকের সময়ের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা লেন যুগকে পুরোপুরি বিদায় করবে ৬-জি।
৬-জি’র আগমনের সঙ্গে মানুষ রিয়েল-টাইম হলোগ্রাফিক যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে। ভার্চুয়াল এবং মিশ্র বাস্তবতার জগতেও মানুষ নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে সক্ষম হবে— যা বেশি দিনের অপেক্ষা নয়।
কৃত্রিম ও বাস্তবতার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে এটি। এমনকি এর দেখানো পথেই আসবে সপ্তম জেনারেশন বা সেভেন-জি।
ভার্চুয়াল এবং মিশ্র বাস্তবতার একটি ব্রিজ হিসেবে ভূমিকা রাখবে ৬-জি।
কবে নাগাদ ৬-জি ইন্টারনেট পাওয়া যাবে
বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এটি নিয়ে কাজ তো করছেই, তবে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তাড়া মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। নোকিয়া, স্যামস্যাং, হুয়াওয়ে আলাদাভাবে এটি নিয়ে গবেষণা করছে। তারা চাচ্ছে যত দ্রুত তাদের ডিভাইসগুলোতে এই পরিষেবা চালু করতে।
আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হলো ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট (আইইইই)। সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০৩০-৩২ সালের মধ্যে বৈশ্বিকভাবে ষষ্ঠ জেনারেশনের ইন্টারনেট মানুষের হাতে আসবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা লেন যুগকে পুরোপুরি বিদায় করে দেবে ৬-জি।
৬-জি’র প্রত্যক্ষ সুবিধা
ইন্টারনেটের ষষ্ঠ জেনারেশন চালু হলে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। সেসবের মধ্যে বিশেষ কয়েকটি হলো: তথ্য আদান-প্রদানে সময়ের ব্যবধানকে বলে ল্যাটেন্সি। সিক্স-জি’তে এই ল্যাটেন্সি রেট অনেক কম হবে। ইন্টারনেট স্পিড এমন পর্যায়ে যাবে যে স্ক্রিন ইন্টারফেসে ‘লোডিং’ পর্বের ইতি ঘটবে।
ই-কমার্স ও কুরিয়ার কোম্পানিগুলো ড্রোন দিয়েই পণ্য ডেলিভারি দেবে। আগামী দিনে বাড়ির দরজায় পণ্য নিয়ে হাজির হবে ড্রোন। এছাড়া, রোবটের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার, স্মার্টহোমে ব্যবহৃত ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তিখাতে আনবে নতুনত্ব।
পরিশেষে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো ফোর-জি তেই আটকে রয়েছে। ২০২১ সালের শেষ দিকে দেশে ফাইভ জি’র লঞ্চিং করা হয় ছোট পরিসরে। হয়ত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও দ্রুত সিক্স জি’র কাভারেজে আসবে।
Spark Slim : বিশ্বের সবচেয়ে হালকা স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসছে টেকনো
সিক্স-জি’র আবির্ভাব ঘটলে বিশ্বগ্রামে তখন হয়ত উন্নত-অনুন্নত শ্রেনিবিন্যাসও থাকবে না খুব একটা। সময়টা তখন এমন হবে যে, মার্কিন মুলুকে যে পরিষেবায় কেউ যুক্ত থাকবে, সেই একই পরিষেবা আফ্রিকা কিংবা দক্ষিণ এশিয়াতেও দেখা যাবে। কারণ, ঐ যে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’— সিক্স জি’র স্বার্থকতা তো এখানেই। গতির মাধ্যমে কাজকে দ্রুত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক সমান্তরাল আবহও আনবে ইন্টারনেটের এই প্রজন্ম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।