স্পোর্টস ডেস্ক : পুনেতে শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর অতিথি হন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। জাতীয় দল ম্যানেজমেন্টের আরও কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন সেখানে। খাবার টেবিলে রীতিমতো আড্ডা জমে ওঠে বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে সুপার লিগে এত ভালো খেলার পর বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্স নিয়েও কাটাছেঁড়া হয় আড্ডায়।
মুখ ফসকে যেখানে ডোনাল্ড বলে ফেলেন, তামিম দলটাকে এক সুতায় বেঁধেছিলেন। ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পারফরম্যান্স আদায় করে নিতেন। বিশ্বকাপ মাঠের বাইরের নেতৃত্ব বল্গাহীন। সাকিব আল হাসান মাঠের ভেতরে যতটা চৌকস, বাইরে ততটাই উদাস। বিশ্বকাপে যেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন তিনি।
ভারত বিশ্বকাপ ঘিরে অনেক আশা দানা বেঁধেছিল। প্রত্যাশা ছিল স্বপ্নের মতো কিছু একটা হবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুটাও ছিল ভালো। কিন্তু ভালো লাগার সে রেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ধর্মশালায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড কেড়ে নেয় আনন্দের মুহূর্তগুলো। ৩৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাকিবরা হারেন বিশাল ব্যবধানে। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের পিচের বৈশিষ্ট্যের কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় আশা করা হচ্ছিল। সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়েছিলেন ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে।
অথচ ব্যাটিং-ব্যর্থতা লজ্জায় ফেলে দেয় পুরো দলকে। টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থ হন প্রথম চার ব্যাটার। ধারণা করা হচ্ছে, সাত দিনে তিন-তিনটি ম্যাচ খেলার ক্লান্তি গ্রাস করেছে ক্রিকেটারদের। সে কারণে বিশ্রাম নীতিতে ভালো খেলার কৌশল নেওয়া হয়েছে দল থেকে। ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবর অনুশীলন বাতিল করা হয়েছে। ১৭ ও ১৮ অক্টোবর অনুশীলন করে পুনেতে চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামবে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে, যে ভারত রয়েছে সেরা ছন্দে।
এক দিন আগেই বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে লাখো দর্শকের উপস্থিতিতে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে রোহিত শর্মার ভারত। টানা তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ দলটি গতকাল বিকেলে এসেছে পুনেতে। হাজার হাজার দর্শকের সামনে যাদের বিপক্ষে ১৯ অক্টোবর দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে নামবে বাংলাদেশ। যদিও এক দিনের ক্রিকেটে ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানো ভীষণ কঠিন ব্যাপার। দেশের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারানো বা এশিয়া কাপে চমক দেওয়াকে পুঁজি করে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাকিবরা। যে ম্যাচ ঘিরে রোহিত শর্মারাও পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। আগের সিরিজ ও এশিয়া কাপের হারের শোধ সুদাসলে ফিরিয়ে দিতে চান তারা।
একটা ব্যাপার হলো ভারতেও ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলতে শিখে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে জিততে জিততে হেরে যাওয়া, ২০১৯ সালের টি২০ সিরিজটিও টান টান উত্তেজনায় শেষ করতে পারা ছিল রোমাঞ্চকর। ওয়ানডে বিশ্বকাপেও জমে উঠতে পারে লড়াই। যদিও ভারতের টিভিতে চোখ রাখলে ভীতি ছড়ানো বিজ্ঞাপন দেখে পিলে চমকে যাবে। একটি বিজ্ঞাপনের দৃশ্যায়ন হলো এ রকম– বাংলাদেশের একজন সমর্থককে দুই ভারতীয় সমর্থক পরোক্ষে ভয় দেখাচ্ছেন। পরের দৃশ্যে ভারত দলের চার-ছক্কার ঝড়।
এ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার– শুধু রোহিত শর্মারাই নন, দেড়শ কোটি ভারতবাসী উন্মুখ হয়ে রয়েছে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিতে। গতকাল পুনেতে কেউ কেউ বলাবলিও করছিলেন, বিশ্বকাপে খুব বাজে পারফর্ম করবে বাংলাদেশ। রাউন্ড রবিন লিগ থেকে বাদ পড়বে তারা। সামনে আর কোনো ম্যাচ জিতবে কিনা, এ নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিলাসবহুল হোটেলে থাকায় সাধারণের এ বার্তা সাকিবদের কাছে পৌঁছাবে না। কিন্তু তারা জানতে পারলে খুবই ভালো হতো। অন্তত বুঝতে পারতেন মানুষের কাছে তাদের বিশ্বকাপ সামর্থ্য কোন পর্যায়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।