সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ২০২৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে আন্ত লেনদেনে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ঢাকার একটি হোটেলে গতকাল সোমবার অনলাইন লেনদেনসংক্রান্ত এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ সম্ভাবনার কথা শোনান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এটি সম্ভব হতে পারে। সব ব্যাংক, এমএফএস (মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস), আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কম্পানিসহ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্ত লেনদেন ব্যবস্থা চালু হবে।
’ অনলাইনে সব লেনদেন তাত্ক্ষণিক সম্পন্ন হওয়ায় নগদ অর্থের প্রয়োজন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ জন্য ‘ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম’ (আইআইপিএস) নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। সেই প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠায় এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করে গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘মোজোলুপ’। চুক্তি সইয়ের অনুষ্ঠানে সশরীরে কোনো প্রতিনিধি আসেননি গেটস ফাউন্ডেশন ও ‘মোজোলুপ’ থেকে।
এ বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে গভর্নর বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে চুক্তিটি ‘ভার্চুয়ালি’ হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের নিয়ন্ত্রণ কার কাছে থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এটি হতে পারে বলে আভাস মিলেছে অনুষ্ঠানে। ‘ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট ইন বাংলাদেশ : আনভেইলিং ইনক্লুশন অপারচুনিটিজ’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠান হয়।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাইজেশনের বিকল্প নেই। আর এ জন্য আন্ত লেনদেন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়বে, দুর্নীতি কমবে, রাজস্ব আদায় বাড়বে।’
নগদ অর্থের লেনদেন কমিয়ে আনতে মোবাইল ব্যাংকিং, ‘বিনিময়’ ও সর্বশেষ কিউআর কোড এনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়া কোনোটির তেমন প্রচলন দেখা যায়নি।
এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতাদের মধ্যে আন্ত লেনদেন করতে চলতি বছরে ‘ইন্টারঅপারেবল’ পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
‘বিনিময়’ ব্যবস্থা আগের সরকারের নির্দেশে হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিযুক্ত গভর্নর তা বাতিল করে দেন। রিকশাওয়ালা, মুচি, দোকানদার ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের মতো প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যক্তিদের অনলাইন লেনদেনের আওতায় আনতে সর্বশেষ কিউআর কোড ব্যবস্থা চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
শুরুতে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে সভা-সেমিনার করলেও তাতে সারা মেলেনি কোনো পর্যায় থেকে। এমনকি ইন্টারঅপারেবল লেনদেনে নিজেদের সম্পৃক্ত করেনি গেটস ফাইন্ডেশনের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ।
নতুন লেনদেন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় গেটস ফাউন্ডেশনের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে গেটস ফাউন্ডেশনের ইনক্লুসিভ ফাইন্যানশিয়াল সিস্টেমসের বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড ন্সিগ্ধা আলী বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন শুধু অর্থায়ন করে। কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাগত বিষয়ে ও নীতিনির্ধারণীতে হস্তক্ষেপ করে না। বিকাশ হয়তো ব্যাবসায়িকভাবে দেখেছে এটি লাভজনক হবে না। তাই তারা প্ল্যাটফর্মটিতে অংশ নেয়নি।
একই বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ইন্টারঅপারেবল সিস্টেম চালু করা হলেও সফল হয়নি, কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে না।’
গভর্নর বলেন, ‘গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নতুন ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম চালু করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন ক্যাশলেস করা সম্ভব হবে। আমাদের পুরো লেনদেন ব্যবস্থাকে ক্যাশলেস হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
আইইপিএসের মাধ্যমে আন্ত লেনদেনে গ্রাহক পর্যায়ে খরচ কমিয়ে আনতে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শারাফত উল্লাহ খান বলেন, “প্রতিযোগিতা বাড়লে খরচ কমে আসবে। পাশাপাশি কোনো ‘সাবসিডি’ দেওয়া যায় কি না তা ভাবা যেতে পারে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



