আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপের ছোট দেশ লিথুয়ানিয়ার মানুষ বছরের সবচেয়ে ছোট রাতে উৎসবে মেতে ওঠে। নানা ঐতিহ্য, আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অশুভ ও নেতিবাচক শক্তিকে দূরে রাখার চেষ্টা করে ছোটবড় সব মানুষ। লাটভিয়ার বছরের সেরা উৎসবের নাম মিডসামার ফেস্টিভ্যাল। প্রত্যেক বছর ২৩ জুন রাতে গোটা লাটাভিয়ায় গ্রীষ্মের সূর্যকে এভাবে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু সেই উৎসবে ঠিক কী পালন করা হয়? উৎসবের খুঁটিনাটী ও ঐতিহ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আন্ডা বেকেরে বলেন, ‘মিডসামার উৎসব চিরকাল চলে আসছে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সবাই একসঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে সমবেত হয়।’
লাটভিয়ায় এই উৎসব ‘লিগো’ বা ‘ইয়ানি’ নামে পরিচিত। হাজার বছরের ঐতিহ্য মেনে উৎসব পালন করা হয়। রাজধানী রিগা থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে কাজডাঙায় রাত আটটা থেকে উৎসব জমে উঠেছে। আয়োজক হিসেবে ইয়ানিস রুডজ্রোগা এক দিন আগে প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। বড় করে বনফায়ারের আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরি। মায়ের কাছ থেকে সেই ঐতিহ্য শিখেছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। ফুলের স্তবক তৈরি করা উৎসবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচারের মধ্যে পড়ে। প্রকৃতির কোলে বা বাগানে যে কোনো বুনো উপকরণই সাজানোর কাজে লাগানো যায়। ঘরে তৈরি জিরার চিজ খাওয়াও উৎসবের অঙ্গ। সবাই মিলে লোকসংগীত গাওয়া ও একসঙ্গে নাচাও চাই। সব বয়সের মানুষই তাতে শামিল হয়।
ফুলের স্তবক দুর্ভাগ্য ও অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে বলে বিশ্বাস করা হয়। নানা বয়সের নারী ফুল, জড়িবুটি ও ঘাস দিয়ে তৈরি স্তবক পরে। পুরুষদের স্তবকে থাকে ওক গাছের পাতা। সব কিছু নিজেকেই গাছ থেকে তুলতে হয়। কিংবদন্তি অনুযায়ী লিগো উৎসবের জন্য সংগ্রহ করা জড়িবুটি জাদুময়, সেগুলির নিরাময়ের শক্তি থাকে। ইয়ানিসের মা ভাইরা রুডজ্রোগা বলেন, ‘এই সব পাপড়ি দিয়ে খুব ভালো চা তৈরি করা যায়। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।’
চার বছর ধরে ভাইরার ছেলে ইয়ানিস লিগো উৎসব আয়োজন করে আসছেন। গত বছর প্রায় ২০০ অতিথি এসেছিলেন। চলতি বছর প্রায় ৩০০ মানুষ সমবেত হয়েছেন। ইয়ানিস বলেন, ‘আমি নার্ভাস নই বা স্ট্রেস অনুভব করছি না। কথায় বলে, নিজের সেরাটা করে দেখাও। তখন নার্ভাস হবার কোনো কারণ থাকে না। কারণ তুমি তো তোমার সেরা দিক তুলে ধরেছো।’ সবকিছু ওক গাছের ডালপালা দিয়ে সাজানোও ঐতিহ্যের অঙ্গ। সেগুলিও অশুভ আত্মা ও নেতিবাচক শক্তি দূরে রাখে বলে বিশ্বাস করা হয়। জঙ্গল থেকে এমন ডালপালা সংগ্রহ করা হয়। আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, প্রকৃতির কোলে খোলা আকাশের নীচেই উৎসব পালন করা হয়। সে কারণে বনফায়ারের জন্য যথেষ্ট কাঠ জমা রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ সারারাত আগুন জ্বলে। বনফায়ার মানুষকে উষ্ণতা দেয়, জাগিয়ে রাখে। একেবারেই ঘুমানোর জো নেই, কারণ, সেটা দুর্ভাগ্য ডেকে আনে। এমনকি বাচ্চারাও সারা রাত জেগে উৎসবে মেতে থাকে। লাটাভিয়ার সবচেয়ে ছোট রাত হয়ে ওঠে অ্যাডভেঞ্চারে ভরা। সূত্র : ডয়চে ভেলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।