সাংবাদিকতা ছেড়ে ১০ বছরে ২শ’ বিঘার ‘আমরাজত্ব’ সোহেল রানার

রঞ্জু খন্দকার : পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর সোহেল রানা যে হিসাবনিকাশে বেশ পাকা, তা তাঁর আমের রাজ্য বিস্তারের দিকে খেয়াল করলেই বোঝা যায়। ২০১৪ সালে মাত্র ১২ বিঘা জমিতে আমের বাগান শুরু করেন তিনি। মাত্র ১০ বছরে সেই রাজত্ব এখন ২০০ বিঘায় পড়েছে।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কৃষিউদ্যোক্তা সোহেল রানার বাড়ি গোডাউনপাড়া গ্রামে। তাঁর আমরাজত্ব বিস্তৃত এখন চার উপজেলায়–পত্নীতলা, সাপাহার, গোমস্তাপুর ও পোরশায়।

তিনি জুমবাংলাকে জানান, এই রাজত্বে তাঁর সঙ্গী ছোটভাই আব্দুল বারি। সে-ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। দুই ভাই মিলে আমচাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।

২০০৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন সোহেল রানা। এরপর ঢাকায় একটি জাতীয় দৈনিকের ফিচার বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু মন পড়ে ছিল তাঁর গ্রামে। কৃষিখামার করতে চান তিনি।

সোহেল রানা বলেন, তিনি পত্নীতলায় পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৪ সালে ১২ বিঘা জমিতে আমের চাষ শুরু করেন। শুরুতে আমের সঙ্গে লিচু, পুকুরসহ সমন্বিত খামার ছিল। সেবার শুধু আম থেকে ৬/৭ লাখ টাকা আয় করেন।

এরপরই হিসাবনিকাশ ঠিক করে ফেলেন পরিসংখ্যানের এই শিক্ষার্থী। ক্রমে আমের রাজত্ব বাড়াতে মনোযোগ দেন তিনি। এই রাজত্ব ছড়ায় ৪ উপজেলায়।

সোহেল রানা জানান, পত্নীতলায় তাঁর জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। এ ছাড়া সাপাহারে ১২০, গোমস্তাপুরে ২০ ও পোরশায় ৩০ বিঘায় আমের চাষ করছেন তাঁরা। এর মধ্যে শুধু পত্নীতলার জমি তাঁদের নিজের। বাকিগুলো ইজারা নেওয়া।

সোহেল রানার বাগানে আমের মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। সেখানে গেলে এখন দেখা মিলবে, সারি সারি আমগাছ। গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সিঁদুররাঙা সবুজ, হলুদাভ আম। রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাত।

জুমবাংলাকে সোহেল রানা বলেন, তিনি বাণিজ্যিকভাবে ৫ জাতের আম চাষ করছেন। এগুলো হলো- আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি-৪, ব্যানানা ও কার্টিমন। নাবি জাতের হওয়ায় তাঁর বাগানে আম বিক্রি কেবল শুরু হয়েছে। মৌসুম চলবে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত।

মৌসুমে তাঁর বাগানে ৬০-৭০ জন লোক কাজ করেন। নিজের আয়ের পাশাপাশি এই লোকগুলোর কর্মসংস্থান করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন তিনি।

চলতি মৌসুমে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা কেমন–এই প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, এবার তাঁর লক্ষ্য দুই শ টন আম বিক্রি। গত বছর তিনি ১৮০ টন আম বিক্রি করেছেন।

শুধু বাণিজ্যিক নয়, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে তাঁর নার্সারিতে উন্নত জাতের আমের চারাও উৎপাদন করেন। সেখানে দেশি-বিদেশি মাতৃ জাতের আম ফলানো হয়। সফল হলে তা বাগানে রোপণ করা হয়।

আমের রাজত্ব বাড়ানোর বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, দেশে আমের চাহিদা অনেক। ফলের এই রাজার স্বাদ নিতে চান বিদেশের লোকজনও। তিনি প্রতিবছর বিদেশেও আম রপ্তানি করেন। সুযোগ থাকলে তিনি আমের এই রাজত্ব আরও বিস্তৃত করতে চান।

চাঁদপুরের আমের সুবাস ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে